Posts

Showing posts from April, 2018

টিউশন, ইনফ‍্যাচুয়েশন ও বিজয়ার এসিমিলেশন

Image
মুখচোরা বা লাজুক না হলেও সুদীপ বরাবরই প্রেম-ট্রেম থেকে শত হস্ত দূরে থেকেছে পুরো স্কুল লাইফে। ইংলিশ মিডিয়াম কো-এড স্কুলে পড়লেও হই-হুল্লোড় করেই স্কুল লাইফটা কাটিয়েছে। শুধু সহপাঠীদের সাথে না, সহপাঠিনীদের সাথেও সুদীপের একটা আলাদা বন্ডিং ছিল। হাসি ঠাট্টা, হই-হুল্লোড়, খেলাধুলা বাদে পড়াশোনায় একটাই বিষয় জানত সে, ভৌতবিজ্ঞান। স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে রিপোর্ট কার্ড খুলে শুধু নিজের ও ভৌতবিজ্ঞানের হায়েস্ট মার্কসটা মিলিয়ে রেখে দিত। মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে না পেরোতেই শুরু হয়ে গেল ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকার লড়াই। উচ্চমাধ্যমিকের প্রত্যেকটা বিষয়ের আলাদা টিউশন। কিছু কিছু তো মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর আগে থেকেই চালু হয়ে গেছে। বন্ধু বান্ধবী সহপাঠীদের অনেকে পড়া শুরুও করে দিয়েছিল। সুদীপের অবশ্য সে সবের বালাই ছিল না রেজাল্ট বেরোনোর আগে অবধি। ফুটবল ও ক্রিকেটের খেপ খেলে ফুরসৎ কোথায় সেই তিন মাসে। রেজাল্ট বেরোতেই বাপে নিয়ে গিয়ে ভরে দিল সেই কোচিং সেন্টারগুলোতে। কেমিস্ট্রি কোচিং সেন্টারে প্রথম যেদিন সুদীপ পা দিলো বাবার সাথে, পড়াশোনার অবস্থা শুনে তো অবাক। প্রথম চ্যাপ্টারটা রেজাল্ট বেরোনোর আগেই স্যারের পড়ানো হ...

ডিমের ডেভিল ও মাছের লাল ঝোল

Image
মামার বাড়ি ভারী মজা, সত্যিই খুব মজা ছিল। যাদের মামাবাড়ি একটু দূরে, বছরে একবার কি দুবারই যাওয়া হয়, তাদের জন্য তো একটু বেশিই মজা। আর যদি সেখানে নিজের চার মামা, এক মাসি, ছোট্ট শহরে ছড়িয়ে থাকে আরো তিন মামা, তিন মাসি, সেক্ষেত্রে বোধহয়, সোনায় সোহাগা। মা'র বক্তব্য অবশ্য - "আদরে বাঁদর"। দাদুর মৃত্যুর বছর দেড়েক বাদে আমার জন্ম। তাই দিদার হিসেবে আমি ছিলাম "দাদু reincarnated"😀😀। ফলে, বুঝতেই পারছেন, মামাবাড়িতে আমার রাজ্যপাট কেমন চলত। মাহিশ্মতি সাম্রাজ্যে বাহুবলিও বাচ্চা তার কাছে। তা বাহুবলি যখন এলো, কাটাপ্পাকে তো আসতেই হবে। কাটাপ্পা সত্যিই মামা, আমার বড়মামা। নির্ভেজাল খাদ্যরসিক। যেমন আমার পিতৃদেব, তেমনই আমার বড়মামা। বাজার করা ও খাওয়াদাওয়া, এই ব্যাপারে এনারা দুজনই আমার শিক্ষাগুরু / দীক্ষাগুরু। বড়মামার ল্যাম্বি স্কুটারের সামনের জায়গাটায় দাঁড়িয়ে যাওয়া আমার জন্মগত অধিকার। জামশেদপুরের বাজার চেনার হাতে খড়ি এইভাবেই। শুধু বাজার কেন, যত রকমের ফাস্ট ফুড বা নাস্তার জায়গা আছে জামশেদপুরে, সবই চিনেছিলাম বড়মামার সাথে। এখনকার এসি দোকান কোনোটাই ছিল না, তবে বিস্টুপুরের ছাপ্পান ভোগের থ...

টুকলি (পার্ট ২)

Image
খটখট করছে রোদ। বৃষ্টি-বাদলা কিছুই হয়নি আগেরদিন, যে ভিজে গিয়ে ঠান্ডা লাগবে। তাও তার নাকি ঠান্ডা লেগেছে। হাজারবার নাক টানলেও নাকে একটুও আওয়াজ নেই, জল তো দুরঅস্ত, তবু নাকের জলে তার রুমাল ভিজে একসা। ব্যাপার কিছুই না, পরীক্ষায় খাতার সাপোর্টের জন্য আনা বোর্ডে সাদা কাগজ সাটিয়ে তাতে লেবুর রস দিয়ে লিখে এনেছে। ভিজে রুমাল বুলিয়ে টুকলি করবে। সে যাত্রায় ওই পদ্ধতিতে টুকলি করা অবশ্য হয়নি, সন্দেহ হওয়ায় বোর্ডটাই বাইরে রেখে আসতে হয়েছিল। কিন্তু তাতে তার কিছু যায় আসে না। কারণ একটি ব্রহ্মাস্ত্র সব সময় থাকত তার, যার বিস্তারিত বিবরণ পরে লিখছি। পরীক্ষার হলে নবাব নন্দনের মতো পায়ের উপর পা তুলে বসে বাবু পরীক্ষা দিচ্ছে। তাহলেই বুঝে যেতাম, হেয়ার রিমুভার দিয়ে পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু অবধি লোম তুলে তার উপর উত্তর লিখে এনে টুকলি চলছে।  তবে এসব তার নিজের মতেই নিতান্ত ছিচকে চুরি। যেদিন তার খাটতে ইচ্ছা করতো না, তখন এইসব মামুলি পন্থা অবলম্বন করতো। টুকলি কে রীতিমতো শিল্পের পর্যায় নিয়ে গেছিলো আমার বন্ধুটি। বেঞ্চে বা দেওয়ালে লিখে রেখে টুকলি করার মত পন্থায় সে মোটেও বিশ্বাস করতো না। তার সব কথা লিখতে গেলে উপন্যাস হয়ে যা...

টুকলি ও মিষ্টি দই

Image
বিখ্যাত (কুখ্যাত ও বলতে পারেন) মাধ্যমিক ব্যাচের পরীক্ষার্থী আমি। ১৯৯৪। দু বার অংক পরীক্ষা হয়েছিল আমাদের। বন্ধুকে পরীক্ষায় উত্তর বলে দিয়ে তার কাছ থেকে অনেকেই খেয়েছেন হয়ত। তাই বলে উত্তর দেখানোর এক মাস বাদে বন্ধুর কাকিমা আপনাকে ডাব বা মিষ্টি দই খাইয়েছে কখনো? আমি খেয়েছি। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিকের দ্বিতীয়বার অংক পরীক্ষা দিতে একাই এসেছি। দমদম কিশোর ভারতী স্কুলে সিট পড়েছিল। স্কুলের গেট খোলেনি বলে বাইরে গাছতলায় দন্ডায়মান। হটাৎ এক ভদ্রমহিলা এসে নাম জিজ্ঞেস করলেন। কনফার্ম হতেই "আরে একা একা দাঁড়িয়ে আছো, এস এস। ডাব খাবে?" বলেই সটান একটা ডাব কাটিয়ে আমার হাতে। হারগিলে চেহারা হলে কি হবে, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে আমার ধানাই পানাই কমই ছিল। ডাবের জল স্ট্র দিয়ে উদরস্থ করতে করতে শুনলাম "আচ্ছা বাবা, তুমি প্রথমবারের অংক পরীক্ষায় কত পাবে?" এমন একটা প্রশ্নের জন্য ঠিক রেডি ছিলাম না। বিষম খেতে খেতেও কোনোক্রমে মুখ তুলে বললাম, "মানে? আপনি কে?" বন্ধুর নাম বলে বললেন, আমি তার কাকিমা। ভালো কথা। তা হটাৎ এই প্রশ্ন? "আহা বলোই না, তুমি যা পরীক্ষা দিয়েছিলে, তাতে কত পেতে পারো?" কেন?...

আজগুবি গল্প

Image
৬০'র দশকের মাঝামাঝি। লে-অফ করে কর্মী ছাটাইয়ের প্রতিবাদে ইউনিয়ন ধর্নায় বসায় কোম্পানি ও কড়া মনোভাব নিয়ে সাময়িক লক-আউট ঘোষণা করেছে। দু পক্ষই অনড়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েও আন্দোলনরত শ্রমিকদের গেট থেকে হটানো যায়নি। প্রায় এক মাস হতে চললো। ৩০'র দশকে বাগেরহাট, খুলনার বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা হয়ে সাবেক কালিমাটি এসেছিল এক যুবক। কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়েছিল। জাতে ব্রাহ্মণ হলেও চিতার ধোঁয়া দেখে যজমানির জন্য দৌড়ানো ছিল ঘোরতর না-পসন্দ। কিন্তু ভবিতব্য। কোম্পানির এক বড় সাহেব ছিলেন বাঙালি। হটাৎ একদিন রাস্তায় বাংলায় কথা বলতে শুনে, সেই সাহেবের বাবা যুবকটিকে নাম জিজ্ঞেস করেন। ভট্টাচার্য্য পদবি শুনেই নিজের বাড়ির সত্য-নারায়ন পুজোর জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। যজমানির কাজ তো বাবা দেশে পৈতে দিয়েই শিখিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু তার নিজের নৈবেদ্য এর চাল-কলা ছাদা বাধায় উৎসাহ নেই। এদিকে বড় সাহেবের বাবা, মুখের উপর না বলতেও অসুবিধা। শেষ অবধি সেই সূত্রেই জামশেদপুরে যজমানি চালু হলো ও ধীরে ধীরে লোকমুখে প্রচার ও হলো। ৬০'র দশকের শুরুর দিকে আরেক বাঙালি সাহেব নিজের বাড়িতে একদিন নিয়ে আসলেন রাচীর মুক্তেশ্...

তালশাঁস সন্দেশ

Image
তালশাঁস সন্দেশ অনেক দেখেছেন। কড়াপাকের তালশাঁস, সূর্যমোদকের জলভরা ও অন্য বহু জায়গায়। এই তালশাঁস সন্দেশটি অবশ্য নরমপাকের ও বরোদা, গুজরাটের। কলকাতায় ভিআইপি সুইটস (উল্টোডাঙ্গা, সল্টলেক, লেকটাউন, জোড়ামন্দির, চিনার পার্ক) এ একটা কড়াপাকের তালশাঁস পাওয়া যেত, একটু বড় সাইজের। ৯৬-৯৭ সালে দাম ছিল পাঁচ টাকা প্রতি পিস। ওই সাইজটা এখন আর দেখি না। তা এহেন মিষ্টি যদি আপনাকে খেতে বলা হয়, আধঘন্টায় কটা খেতে পারবেন? ৫-১০-২০। তার উপরে হলে একটু টাফ। আচ্ছা, পঞ্চাশ? সাথে এক গ্লাস জল দিলে? আর যদি বলি একশ? না, আমার কলেজের সহপাঠী ও বন্ধু "বাঘের বাচ্চা"র ঘটনা নয় এটা। তবে, ইনিও বাচ্চা, মানে "বাচ্চা ভুত"। আমার ওই কি যেন বলে, ওই বয়সের বন্ধু, পাড়ার ছেলে। তালশাঁসের ব্যাপারে আসার আগে তার বায়োডাটা একটু দেখে নেওয়া যাক। পাড়ার পুজোর ভোগের খিচুড়ি, হালকা ধোঁয়া ওঠা প্রায় তরল, বালতি ধরে চুমুক দিয়ে শেষ করতে সক্ষম। অনুষ্ঠান বাড়িতে খান ৩০-৩৫ টি গলদা চিংড়ি, খান বিশেক পাতুরি খেয়েও তিনি সাবলীল ভাবে হাফ বালতি মাংস উড়িয়ে দিতে পারেন। পাড়াতুতো এক দাদার বৌভাতে পরিচিত এক ক্যাটারার কাজ করছিল। বন্ধুরা একটু সন্ধ্য...

শুভ নববর্ষ

Image
নববর্ষ বলতেই মনে পড়ে বলবন্ত সিংয়ের চা। কেশর দেওয়া, সাথে জিলিপি। না না, পিতৃদেব নববর্ষ উপলক্ষে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতো না। একবারই নববর্ষের সকালে খেয়েছিলাম। ১৪০৮ (ইং 2001) এর নববর্ষের ভোররাত, সাড়ে তিনটে বাজে। খাটের পাশের জানালায় বন্ধুর ডাক - "এই কুম্ভকর্ণ? ওঠ।" চোখ কচলে দেখি, একতলার কার্নিশে উঠে এক বন্ধু ডাকছে। ধড়মড় করে উঠে, ঘড়ি দেখে ঘাবড়ে গেলাম। প্রভাত ফেরির সব ব্যবস্থা তো রাতেই করে এসেছি। কি হলো আবার? জানালার কাছে আসতেই বলল, "বেশি কথা বলার টাইম নেই, দশ মিনিটের মধ্যে সামনের নির্মীয়মান ফ্ল্যাট বাড়িটায় চলে আয়।" ধুত্তোর!!!! কিছুই বুঝলাম না। তাড়াতাড়ি করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। প্রভাত ফেরির জন্য রাতেই আলাদা করে রাখা প্যান্ট ও তার ওপর সাদা পাঞ্জাবিটা গলিয়ে, ফ্ল্যাট বাড়িটায় পৌঁছে চক্ষু চড়কগাছ। সে বছর পয়লা বৈশাখে বিয়ের ডেট (কোন পঞ্জিকা জিজ্ঞেস করবেন না, বোধহয় "গুপ্ত-প্রেম") ছিল। জনৈক বন্ধুর প্রেম দুই দিকের কোনো বাড়িতেই মানবে না। মেয়ের বাবা আবার পুলিশের এসআই। এমতবস্থায় আগের দিন রাতে দুজনে ঠিক করে, পয়লা বৈশাখেই কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করবে। মাঝরাতে ব...

অশৌচ ও দই-কাতলা

১৯৪৩ সাল। দু-বছর বয়সে পিতৃহারা ছেলেটি আজ পাঁচ বছর বয়সী। দিদির বয়েস সাত। দিদির তবু যদিবা আধো আধো বাপের মুখ মনে পড়ে, ভাই তো জানেই না বাবা কি। রাস্তা দিয়ে চলেছে নিজের কাকাদের বাড়ি, ভরদুপুরে। কি একটা পুজো আছে যেন। বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে ১৯৩০ সালে কলকাতা এসে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন ভদ্রলোক। বিবাহের পর সংসার পেতেছিলেন কলকাতাতেই। নিজের দুই ভাই কেও চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তারা যদিও তৎক্ষণাৎ পরিবার আনেননি। ১৯৪০ সালে তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো ছবিটা কেমন পাল্টে গেল। তিন ভাইয়ে মিলে যে বাড়ি কেনার জন্য মোটা টাকা বায়না দেওয়া হয়ে গিয়েছিল, তা রাতারাতি দু জনের নামে হয়ে গেল। দেশের সম্পত্তিও বিক্রিবাটা করে দু-ভাগেই ভাগ হলো। সবই অজান্তে। ২৩-২৪ বছরের একটি মহিলা, সাথে দুই সন্তান, ঠাঁই হল বাপের বাড়িতে। সেখানেও বাপ বেঁচে ছিল বলে জুটলো একটা ঘর। তিনি চোখ বুজতেই ভাই'রা না তাড়ালেও, ইলেক্ট্রিকের লাইনটাও কেটে দিলো। মহিলা জানত সেলাইয়ের কাজ। খেলনা বানাতে পারতো। নিজের দুই সন্তানের মুখ চেয়ে ঘরেই সেলাইয়ের কাজ চালু করলো টুকটাক। তাই দিয়ে কি তিনটে পেট ভরে দুবেলা? তায় আবার সেই সময়ের কুখ্যাত মন্বন্তর। পেটের...

কাটা-খাউনি ও মেছো-পেত্নী

Image
খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে রাজকুমারী একদম মা-বাপের যোগ্য পুত্রী। দুপুরে ও রাতে, আঁশটে গন্ধ যদি না থাকে পাতে, কান্না ও চিৎকারের ঠেলায়, বারান্দা হতে কাক-পক্ষী পালায়। এটা অবশ্য তার হেরিডিটারি।  মহারানীকে বাড়িতে ডাকতো কাঁটা-খাউনি বলে। বিয়ের পরে মহারানীকে নিয়ে জামশেদপুর এসেছি। কদমা বিজয়া হেরিটেজ কমপ্লেক্সে একটা ফ্ল্যাটে নতুন বাসা বেঁধেছি কপোত কপোতীতে।  এক রবিবার, সকালবেলা সাকচি বাজারে বেশ ভালো সাইজের পাবদা পেলাম। মহারানী বেজায় খুশি। শীল-নোড়ায় সর্ষে বেটে ও তা ছেকে বানালেন পাবদার ঝাল। রান্না কমপ্লিট করে মহারানী গেলেন স্নানে। স্নান সেরে রান্নাঘরে ফিরেই চিৎকার। আমি টিভি ছেড়ে দৌড়ে রান্নাঘরে, কি হলো? দরজায় পৌঁছাতেই স্টেনগান স্টার্ট। "একটা মাছ খেলে কেন? এইটুকু তর সইছিল না? সাথে তুলতে গিয়ে কতটা সর্ষের ঝাল নষ্ট করেছ, কি দিয়ে ভাত মাখব এখন?" বলেই হাউমাউ করে কান্না। আমি তো থ। কিন্তু জানলার কাছে একটু সর্ষের দাগ দেখে সন্দেহ হওয়ায় বারান্দা দিয়ে উকি মারলাম। দেখি একটি মার্জার একতলার ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের কার্নিশে বসে মহানন্দে পাবদা মাছ খাচ্ছেন। কোনো মতে মহারানীকে শান্ত করে ব্যাপারটা বলতেই, রান্নাঘ...

বিয়েবাড়ির ভোজ

Image
মাটিরভাঁড়ে জল ও কলাপাতায় পরিবেশন করা খাবার, বিয়েবাড়ির ভোজ বলতে আশির দশকের প্রথমার্ধ অবধি এই ছিল। খুব ছোট ছিলাম, তাও একটু একটু মনে আছে। কলাপাতা কে সরিয়ে তার জায়গা নিলো শালপাতার থালা, তারপর তো ক্যাটারিং জাকিয়ে বসলো। আজও আমাদের বাড়িতে কলাপাতায় খাওয়া বা বিয়েবাড়ির কথা উঠলে একটা ঘটনা নিয়ে আলোচনা হবেই। আমি বহুবছর বাংলায় লেখা বিয়ের কার্ড দেখিনি, তাই এখনকার কথা বলতে পারবো না। তবে যে সময়কার কথা বলছি, তাতে দুটো জিনিস লেখা থাকতোই। এক, আপনি যত লোককেই নিমন্ত্রণ করুন না কেন, নিচে ডিসক্লেমার লেখা থাকবেই - "পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অথিতি নিমন্ত্রণ বিধি প্রযোজ্য"। দুই, "এই উপলক্ষে 'আপনি / সবান্ধবে (বা সপরিবারে)' উপস্থিত হইয়া.............." এবং একা নিমন্ত্রণ করার হলে 'সবান্ধব' অথবা সপরিবার হলে 'আপনি' শব্দটি পেন দিয়ে কাটা থাকত। নিমন্ত্রয়িতা/ নিমন্ত্রয়িত্রী রওনা হলেই, কার্ড খুলে 'আপনি / সবান্ধব' এর মধ্যে কোনটা কাটা সেটা দেখতাম আগে, সবাইকে বলেছে কিনা জানার জন্য। তো এমনই এক 'সবান্ধব' কাটা ও 'আপনি' তে টিক দেওয়া বিয়ের নিমন্ত্রণ এসেছিল বাবার...

স্লিম নয় পাতি রোগা

Image
স্লিম নয় পাতি রোগা। কাউকে কতটা রোগা দেখেছেন? তাল পাতার সেপাই বা কাকতাড়ুয়া বলে ছোটবেলা থেকে সবাই ডাকতো। নিজের দাদাকে না হয় ছেড়েই দিলাম, স্কুলের বন্ধু-বান্ধবীরা আছে। রোগার লেভেলটা জানতে চাইলে তারা সাক্ষী হতে পারে। এমনকি আমার স্কুলের টিচাররাও ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন, ওনারাও চাইলে বলতে পারেন। টিংটিংয়ে বা প্যাঙা এসব খেতাব যাদের দিয়েছেন, তাদের চেহারা কল্পনা করে, তার থেকেও রোগা যদি কোনো চেহারা আপনার মনে ভেসে ওঠে, আমি অনেকটা তেমন ছিলাম। বিশ্বাস না হলে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। পড়তাম ক্যালকাটা এয়ারপোর্ট ইংলিশ হাই স্কুলে, এয়ারপোর্ট ২ নং গেটের কাছে। ক্লাস ৮, ৯ ও ১০ ওই বিল্ডিংএই পড়েছি। স্কুলের জানালার গ্রিল গুলো ঠিক ইটের গাঁথনীর মতো ডিজাইন। এবং আমি তার মধ্যে দিয়ে গলে যেতে পারতাম। বহুবার করেছি। বাজারে হেন কোনো হেলথ ড্রিংক ছিল না যা বাবা-মা আমার উপর প্রয়োগ করেনি। এখনকার মতো কনজিউমার কোর্টের এত রমরমা থাকলে প্রত্যেক কোম্পানিকে আমি কাঠগড়ায় তুলতে পারতাম। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের পর ডিপ্লোমা, যাদবপুর। ট্রাডিশন বজায় ছিল বহাল তবিয়তে। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯৬ রক্তদান শিবির, আমায় ধরে নিয়ে গেল এক সিনিয়ার। ডাক্তার আমার ওজন দেখে...

BF - বিএফ

এখন সবাই bf বললেই বয়ফ্রেন্ড বা বেস্টফ্রেন্ড ভাবে। কত সরল মন। যাদবপুর থেকে উল্টোডাঙ্গা ট্রেনে ফিরতাম। ক্যানিং-দত্তপুকুর লোকালে ফিরলে শিয়ালদায় চেঞ্জেরও ব্যাপার নেই। ১৯৯৭ এর ফেব্রুয়ারীর এক বিকেলে সেই ট্রেনে ফেরার সময় হটাৎ করে এক বন্ধু চেঁচিয়ে বলে উঠলো, "কাল সবাই bf দেখতে যাবি?" পুরো কম্পার্টমেন্টের লোকজন আমাদের দিকে ঘুরে গেল। তখন ইন্টারনেট বা মোবাইলের রমরমা ছিল না। ইংরেজির চার অক্ষরের শব্দটার প্রচলন ও কম ছিল। তাই bf বলতে আমরা ও বাকিরা অন্য কিছু বুঝতাম। বন্ধুটি ইয়ার্কিটা মেরেই সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "বইমেলা চলছে, আমি বন্ধুদের Book Fair এর কথা বললাম, আপনাদের কি হয়েছে?" আর কি হয়েছে? সামনের সিটে এক ভদ্রলোক বউ কে নিয়ে বসেছিলেন, হাতে এই প্লাস্টিকের পেপসি। বন্ধুর কথা শুনে হতচকিত হয়ে বিষম খেয়ে পেপসিটি এমন জোরে চিপেছেন, যে ভিতরের জিনিস নিজের জামায়। বন্ধুর ব্যাখ্যার পরে, বউয়ের গঞ্জনা ফ্রি। "সবসময় আট-ভাট চিন্তাভাবনা। দিলে তো জামাটা নষ্ট করে?" ©সুব্রত চৌধুরী

"বাঘের বাচ্চা"

আমার মতো অতটা রোগা না হলেও, ডিপ্লোমা তে আমাদের এক বন্ধু ছিল, আমরা "বাঘের বাচ্চা" ডাকতাম (ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, তাই নাম নিলাম না)। আমাদের সাথেই পড়ত পলাশ, বাঁকুড়ায় বাড়ি। ওর দিদির বিয়েতে সব বন্ধুদের নেমন্তন্ন। পলাশ ও অন্য বন্ধুরা এসে বাড়িতে বলায় ছাড়পত্র মিলল যাওয়ার। রবিবার বিয়ে, তাই শনিবার সকালেই ব্যাগ গুছিয়ে কলেজ, ওখান থেকে সোজা বাঁকুড়া যাওয়া হবে। "বাঘের বাচ্চা" যাবে না। বিয়ের দুদিন বাদেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমার শেষ দিন। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের দরুন প্রতিপক্ষ হলেও, আমরা অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। শনিবার আবার বললাম। চল, তুই আর আমি না হয় ফার্স্ট ব্যাচে খেয়ে রাতের ট্রেনে চলে আসবো। মঙ্গলবার অবধি সময় আছে। হটাৎ বাবুর সুমতি হলো। বললো চল বাড়িতে, মা কে বলে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে আসি। যাদবপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ, সেইখান থেকে হেঁটে অখিল মিস্ত্রি লেনের কাছে ওদের বাড়ি। একরাশ প্রশ্নবাণ সামলে কাকিমার থেকে ছাড়পত্র আদায় হলো। বললেন, খেয়ে রওনা হও। সিন - ১ (দুপুর আড়াইটে) দুজনে পাশাপাশি বসেছি। কাকিমা থালায় আখের গুড় ও আলুর তরকারির সাথে খান দশেক করে রুটি দিয়ে আবার রুটি বানাতে গেলেন...

ইলিশ ভাপে।

Image
২০০৬ সালের জুন-জুলাই। হলদিয়ায় টাটা স্টিলের হুগলি মেট কোক প্রজেক্ট। হলদিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কোম্পানির (HFC) খালি জমিতে তৈরি হয়েছে হুগলি মেট কোক। তখন সবে প্রজেক্ট শুরু। প্রজেক্টের জন্য HFC র মেন গেট না ব্যবহার করে, পাতিখালীর দিক থেকে একটা এন্ট্রি গেট বানানো হয়েছিল। প্রজেক্টের ওপর সীমানা হলদি নদীর পাড়। ব্যাচেলর ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য প্রজেক্টই ঘর-বাড়ি হয়ে যায়, যদি মনমতো সাথী জুটে যায় তাহলে তো কথাই নেই। আমি ও ব্যতিক্রমী ছিলাম না। ওই প্রজেক্টেই আলাপ হয়েছিল "বানু"র সাথে। "বানু" নামটা আমারই দেওয়া। রান্নার হাতটা দারুন ছিল বানু'র। কুক না থাকলে মাঝেমধ্যে বানু'ই রান্না করে খাওয়াতো। একদিন সকাল থেকে বৃষ্টি পড়েই চলেছে। মাঝে মধ্যে মুষলধারে, বাকি সময় ইলশেগুঁড়ি। সাইটের কাজ-কম্ম শিকেয়। হটাৎ বানু'কে বললাম চলো একটু ঘুরে আসি। দুজনে রেনকোট চাপিয়ে হাটতে হাটতে সাইটের শেষ মাথায় চলে এসেছি। হটাৎ বানু'র মাথায় এলো, শেষ সীমানায় হলদি নদীর দিকেও তো একটা গেট আছে, ওটা দিয়ে বেরোলেই তো নদীর পাড়। সিকিউরিটি কে বলে, ওই গেট খুলে, নদীর পাড়ে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে নদীর...

পতি ট্রেনিং ম্যানুয়াল - CFC এর কয়েকজন বোনের অনুরোধে। Others may ignore.

জানতাম, আমার বোন ও দিদিরা নিজেরাই দেখতে চলে আসবেন। আর যদি কোনো ভায়া এই লিংক পেয়ে এসে থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই। তা এসে যখন পড়েছেন, তখন জেনে রাখুন, এই বাবা ভাট বকেস্বরানন্দের কথামৃত। "দিবা-নিশি পোস্ট যাহারা করেন সিএফসি তে। প্রেম-ভালোবাসা যেন সদা বিরাজে ঘরে তে।। পতি যদি নাই করে প্রেম অবিরত। সুস্বাদু খাদ্য পত্নী, কভু না রাধিত।। লোভনীয় পোস্ট দেখি প্রশ্ন জাগিলো। সাজাইয়া দিতে কি, যদি প্রশংসা না মিলিলো।। পত্নীগনে সব এবে শুন দিয়া মন। পতিগণ বন্ধুমহলে করে হে গুনকীর্তন।। করিও না চেষ্টা পতিরে পাল্টাইবার তরে। উল্টো বুঝলি রাম হয়ে পরিবে ফাঁপরে।। খাদ্য লোভে প্রেমালাপের কথা পড়িবার পরে। মনে না হয় কেউ এই লিংক দেবে নিজ পতিরে।। তবু যদি কোনো ভায়া পাও এই ঠিকানা। পত্নীরে জড়াইয়া, চুমু খেও চারখানা।। যে পতিরে তার পত্নী পড়ায় এ পাঁচালী। জেনে রেখো তব ভাগ্য চওড়া কপালী।। যেখানে পাইবে সুযোগ কহ ডার্লিং হানী। সর্বদা জানিবে জীবন হইবে প্রেমের কাহিনী।।"

অফিসিয়াল ট্যুর ও খাওয়াদাওয়া

Image
"সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে । তোমরা যে বলো দিবস-রজনী 'ভালোবাসা' 'ভালোবাসা' —. সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময় " না পাগলা না। সে বড়ই সুখময়। কর্মসূত্রে ট্যুরে যাওয়া আমার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এয়ারলাইন্সের স্যান্ডউইচ ও আমরস, ওমলেট ও নাগেটস বা চিকেন টিক্কা মসলা সহযোগে ভাত (চার চামচ - সে যে আমার পেটের কোন কোনায় চলে যায় বুঝতেও পারি না) এই সব খেয়ে খেয়ে মুখে চড়া পরে গেছে। তা আমার এহেন ট্যুর নিয়ে নিন্দুকেরা আমার পিঠ পিছে অনেক কথা রটিয়ে থাকেন। কেউ কেউ তো মহারানীকে এই অবধি বলেছে যে, নিশ্চয়ই কোনো এয়ার হোস্টেসের সাথে ইনটু-সিন্টু চলছে, তাই এত এত ফ্লাইটে ঘোরাঘুরি (যেন প্রতিটা ফ্লাইটে একই এয়ার হোস্টেস আমার জন্য বিশেষ ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে)। মহারানী অবশ্য শোনে ও মিটিমিটি হাসে। কারণ সে জানে "The way to a man's heart is through his stomach"। আমার ক্ষেত্রে তো সর্বাত্মক ভাবে প্রযোজ্য এবং আমার ভুঁড়িটা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তাই ট্যুর শেষে বাড়ি ফিরে যখন বউয়ের হাতের খাসির মাংস বা গাজরের হালুয়াটা পাতে এসে পড়ে, তখন আমি ফিদা হয়ে যাই। ...

"ফার্স্ট কাউন্টার"

কথাটি শুনেই অনেক পাবলিকের কান খাড়া হয়ে গেছে। কেউ কেউ কলেজ জীবনের কথা ভেবে নস্টালজিক ও হয়ে পড়েছেন হয়তো। হ্যা, যা ভাবছেন, ঠিক তাই। কলেজ ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সময় বন্ধুর সিগারেটে ভাগ বসানোর মোক্ষম স্লোগান। ধরাতে দেখলেই চেঁচিয়ে ওঠো, কেল্লা ফতে। পুরোটাও বলবে না, শুধু "এফসি" বলেই খালাস। পিছনে আরো লোকজন থাকতো, "এসসি" ও "টিসি" মানে সেকেন্ড ও থার্ড কাউন্টার।  যাদবপুর পলিটেকনিকে পড়াশোনা আমার। আমি সিভিল এ ছিলাম। ইন্সট্রুমেন্টেশনে একটা ছেলে ছিল (নাম টা উহ্য থাক), আমার তাসের পার্টনার। এমনিতে আমার খুব ভালো বন্ধু কিন্তু একটা ব্যাপারে ওকে সহ্য করতে পারতাম না। পয়সাকড়ি তো তেমন পকেটে থাকতো না তখন, তাই বেশিরভাগ সময় বিড়িই ভরসা ছিল। শুধু দুপুরে টিফিন খেয়ে একটা সিগারেট খাওয়াটা ফিক্সড ছিল। এবং সেখানেই গল্প। সিগারেটটা ধরাতে না ধরাতেই উনি উদয় হতেন "এফসি" (FC) চিল্লিয়ে। প্রথম প্রথম অতটা মনোযোগ না দিলেও কয়েকদিন বাদে থেকে ব্যাপারটা অসহ্য হয়ে দাড়ালো। আমায় লক্ষ্য রাখতো আর যে কোনায় গিয়েই সিগারেটটা ধরাই না কেন, বাবু ঠিক হাজির। কি করি, কি করি, ভাবতে ভাবতে একটা উপায় বার করলা...

"মাংসের নুন-ঝাল" - A story translated by me, written by Sayantan

Image
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বন্ধু Sayantan Bose এর একটা গল্প (পোস্ট) ও ছবি দেখতে পেলাম। ইংলিশে লেখা। স্মৃতিগুলো তাজা হয়ে উঠলো। উপযাজক হয়ে প্রস্তাব দিলাম লেখাটা বঙ্গানুবাদ করে দেবো। সায়ান্তন কোনো নামকরণ করেনি গল্পটার। তাই আমিই দিলাম। ভাষা দিবসের উপলক্ষে আগে বাংলা অনুবাদটি দিলাম। তার পরে আসল গল্প ও লেখকের তোলা ছবি। The original story in english, written by Sayantan is given brlow. The photograph is also taken by Sayantan. "মাংসের নুন-ঝাল" এই ছবিটার সাথে জড়িয়ে আছে এক সুমধুর স্মৃতি। প্রত্যেক সাধারণ বাঙালির মনের চিলেকোঠায় লুকিয়ে থাকা ছোট্ট অনুগল্প। প্রায়শই রবিবারের বারবেলায় মঞ্চস্থ হতো বা এখনো হয়ে থাকে এই কাহিনী, যদিও এবার আমার জীবনে বুধবার হয়েছে। প্রেক্ষাপট ও গল্পের যাত্রাপথ একই রয়ে গেছে আজও। সমানভাবে রয়ে গেছে ছোটবেলার সেই মজা ও রোমাঞ্চকর অনুভতি, যা আজ এত বছর পরেও অম্লান, অটুট। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বোধহয় সত্যিই আমাদের বয়স বাড়ে না। রবিবারের অপরাহ্নে (ও কখনো এই রকম বুধ বা অন্য কোনো বারেও) রান্নাঘর থেকে ভেসে আসতো রেয়াজি খাসির কষানোর গন্ধ। মায়ের হাতের রান্না করা সেই রেয়াজি...

আমাদের স্কুল

টালির চালে ঢাকা আমাদের পুরোনো স্কুলটা অনেক ভালো ছিল। ক্যালকাটা এয়ারপোর্ট ইংলিশ হাই স্কুল। টালির চালের তলায় ক্যানভাস কাপড়ের ফলস সিলিং। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা ইটের মোটা দেওয়াল। ঘটাং ঘটাং করে ঘুরতে থাকা ডিসি মোটরের পাখাগুলোর তলায় বসতে ভারী আরাম। কোনো স্কুলে সাতটা খেলার মাঠ শুনেছে কেউ? ছিল, আমাদের স্কুলে ছিল। কাঠের বিশাল মেইন গেটটা দিয়ে ঢুকলেই সোজা রাস্তার বা-হাতে ত্রিকোণ আকৃতির একটা মাঠ। যার পরেই ছিল প্রাইমারি সেকশন। নার্সারি থেকে ক্লাস থ্রি। রাস্তার ডানদিকে ছোট গেট ও তার পরেই অফিস ঘর। ফিরে আসব সেখানে, আগে ক্লাস ও মাঠগুলো ঘুরে নিই একবার। সোজা পিচের রাস্তাটা ধরে অফিসঘর (তৎসহ ক্লাসরুম) কে পেরিয়ে, প্রাইমারি সেকশনকে বাদিকে রেখে এগিয়ে গেলেই ডানদিকে আবার একটা মাঠ। মাঠের ওপর প্রান্তে প্রাইমারি সেকশনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ক্লাসরুম, ক্লাস ফোর। তার পাশে দুটো ছোট তালাবন্দি ঘর ছিল, ভিতরে ভাঙা সাইকেল ও হাবিজাবি জিনিসে ভরা। রাস্তার শেষ প্রান্ত থেকে ডানদিকে ঘুরে ক্লাস ফোরকে ডান পাশে রেখে এগিয়ে গেলে সোজা ক্লাস ফাইভ।  ফোর ও ফাইভের মাঝে আরো একটা মাঠ, তবে ছোট। ক্লাস ফাইভে ধাক্কা খেয়ে আবার ডানদি...

আমার ভ্যালেন্টাইন

বাবা প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেন মহাশয়ের মেয়ের সাথে। মেটে রঙের শাড়ি ও তার সাদা আঁচল। দুধে আলতা গায়ের রং। ভারী নরম ও মিষ্টি স্বভাবের। বাল্যকালেই অসমবয়সী প্রেমে পড়ে গেলাম। উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির মেয়ে, ইচ্ছা থাকলেও বাগুইআটি থেকে গিয়ে রোজ রোজ দেখা সাক্ষাৎ সম্ভব নয়। তাই নববর্ষ বা পুজোর আগে দিয়ে ওইদিকে গেলেই টুক করে তার সাথে দেখা করে আসতাম। কিশোর বয়েসে বাবা আলাপ করিয়ে দিলেন বলরাম বাবুর মেয়ের সাথে। একটু রাশভারী হলেও স্বভাবে মিষ্টতা বেশি। তবে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারলাম না সেরকম। এলাকায় যারা থাকতো তাদের পিছনেই ঘুরঘুর করতাম। স্কুল পেরিয়ে কলেজে গেলাম। তারপর এলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ। পাড়ার মুখে নতুন যে বাড়িটা হলো, তার একতলায় দেখতে পেলাম আমার প্রেয়সীকে। আমার ভ্যালেন্টাইন। সেই মেটে রঙের শাড়ি ও তার সাদা আঁচল। রংটা যেন আরো ঘন দুধে আলতা। একরাশ সুমধুর গাম্ভীর্যের জমাট আস্তরণে নিজের নরম ও মিষ্টি পারসোনালিটিটা ঢেকে রাখা। চোখাচুখি হতেই প্রেমে পড়ে গেলাম। তাকে পেয়ে জীবন যেন ধন্য হয়ে গেল। আজ বিয়ের ন বছর পরেও, গুজরাত প্রবাসী হয়ে গেলেও, পাড়ায় ঢোকার মুখে তার সাথে দেখা হয়। প্রেমালাপ ও চলে। আমার অর্ধাঙ্গিনী দুঃখ...

Reminiscence of Culinary in a Bengali Marriage 32 years back.

Image
Typical Bengali marriage, were more of a fiesta rather than just a customary ceremony, as it has got zeroed down today. For near & dear ones, neither there was such attendance pressure of the child at school nor were they residing so far, that they had to book the tickets 120 days in advance. All of them would assemble at the marriage house at least 4-5 days before the marriage day and the grand gathering would remain till 4-5 days after the marriage. Catering or marriage organisers were unborn child on those days and everything were organised by the family members & relatives. All of them loved to take up respective responsibilities on their shoulders starting from being the store-in-charge, purchase-in-charge for grocery & vegetable, transportation-in-charge, cooking supervisor & so on. “Thakur” (or the main cook) along with his helpers would set-up his base, 2 days prior to the marriage, either in the backyard or the terrace as the case would be. Separate swee...

অতঃ ভাল্লুক কথা - A tale of Beer

English version given below. "আমি আসছি একটু।" "এই তো সমুদ্রে চান করে এলাম, আবার কোথায়?" কি করে বোঝাই বলুন তো। এরেঞ্জড ম্যারেজ। শ্বশুরবাড়িতে কেউ চা পর্যন্ত খায় না। সেই বাড়ির জামাই, তাও যদিবা বউ সিগারেটটা মেনে নিয়েছিল, এ তো শুনলেই মুড়োঝাটা। বাঙালির চিরপরিচিত তিনটি হানিমুন স্পট "দিপুদা"র থেকে "পু" কে বেছে পুরী এসেছি হানিমুনে। দোষ অবশ্য সম্পূর্ন ভাবে মহারানীর। মানালির সমস্ত বুকিং ক্যানসেল করে পুরী এসেছিলাম, কারণ বেগম সাহিবার ধারণা ছিল, যদি পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে দিই। পুরীর সমুদ্রে অনেক লোক থাকে, তাই জলে ডুবিয়ে মারতে পারবো না। পুরী এসে থেকে ভাবছি, এই সুযোগ। হানিমুনেই রাস্তাটা করে রাখতে হবে। শ্বশুরবাড়ির যা অবস্থা, এখনই বিড়াল না মারলে, বিবাহিত জীবনে অল্পবিস্তর "ঢুকু ঢুকু ঢালিনী"র সাথে সম্পর্ক আর থাকবে না। অবিশ্যি আমাকে বদ-বখাটে ভাববেন না। রোগা হওয়ায় আমার কাছে দিল্লির এক ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন ছিল, বিয়ার খাওয়ার। অনেক ইনিয়ে বিনিয়েও যখন হলো না, হটাৎ করে বুকে র‍্যাম্বোর মতো বল এনে বললাম, "আমি একটা বিয়ার খাবো, তাই যাচ্ছি। তুমি খাবে...