শুভ নববর্ষ
নববর্ষ বলতেই মনে পড়ে বলবন্ত সিংয়ের চা। কেশর দেওয়া, সাথে জিলিপি। না না, পিতৃদেব নববর্ষ উপলক্ষে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতো না। একবারই নববর্ষের সকালে খেয়েছিলাম।
১৪০৮ (ইং 2001) এর নববর্ষের ভোররাত, সাড়ে তিনটে বাজে। খাটের পাশের জানালায় বন্ধুর ডাক - "এই কুম্ভকর্ণ? ওঠ।" চোখ কচলে দেখি, একতলার কার্নিশে উঠে এক বন্ধু ডাকছে। ধড়মড় করে উঠে, ঘড়ি দেখে ঘাবড়ে গেলাম। প্রভাত ফেরির সব ব্যবস্থা তো রাতেই করে এসেছি। কি হলো আবার?
জানালার কাছে আসতেই বলল, "বেশি কথা বলার টাইম নেই, দশ মিনিটের মধ্যে সামনের নির্মীয়মান ফ্ল্যাট বাড়িটায় চলে আয়।"
ধুত্তোর!!!! কিছুই বুঝলাম না। তাড়াতাড়ি করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। প্রভাত ফেরির জন্য রাতেই আলাদা করে রাখা প্যান্ট ও তার ওপর সাদা পাঞ্জাবিটা গলিয়ে, ফ্ল্যাট বাড়িটায় পৌঁছে চক্ষু চড়কগাছ।
সে বছর পয়লা বৈশাখে বিয়ের ডেট (কোন পঞ্জিকা জিজ্ঞেস করবেন না, বোধহয় "গুপ্ত-প্রেম") ছিল। জনৈক বন্ধুর প্রেম দুই দিকের কোনো বাড়িতেই মানবে না। মেয়ের বাবা আবার পুলিশের এসআই। এমতবস্থায় আগের দিন রাতে দুজনে ঠিক করে, পয়লা বৈশাখেই কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করবে। মাঝরাতে বাকি দুই বন্ধুর সাহায্যে কেবল্ টিভির তার বাধার মই জোগাড় হয়। দোতলার বারান্দায় সেই মই সেট করতেই "মিথিলা" হতে "জানকি'র" পলায়ন।
"যাহঃ বাবা, সব তো হয়েই গেছে। খামোকা আমায় ঘুম থেকে তুলে আনলি কেন? জানিস ই তো, ওর বাবা পুলিশে আছে, আমার বাবার সঙ্গে কাকুর সম্পর্ক খুব ভালো। আমাকে খামোকা জড়াচ্ছিস কেন?"
"নামার সময় মইটা উল্টে পড়ায় সবার ঘুম ভেঙে গেছে। বাগুইআটি থেকে বেরোবো কি করে, সেটা ভাব? ভিআইপি থেকে সাতগাছি, শ্যামনগর, সব রাস্তায় চেকিং চলছে। তুই সাথ না দিলে, আমিও বলে দেব, আমায় প্রেমপত্রগুলো তুইই লিখে দিতি।"
আচ্ছা ফাঁসান ফাসলাম তো!! কি করি, বললাম "তোরা যে ভাবে পারিস বাগুইআটি থেকে বেরো। কনে কে নিয়ে আমি আসছি।"
"কি করবি? এক কাপড়ে বেরিয়েছে, এই লাল সালোয়ার কামিজ পরে। তোর বাড়িতে তো দিদি বা বোনও নেই, যে ড্রেস চেঞ্জ করবে?"
"তোরা যা, সাড়ে ছটা নাগাদ বলবন্ত সিংয়ের হোটেলে দেখা হবে।"
"কি করবি? এক কাপড়ে বেরিয়েছে, এই লাল সালোয়ার কামিজ পরে। তোর বাড়িতে তো দিদি বা বোনও নেই, যে ড্রেস চেঞ্জ করবে?"
"তোরা যা, সাড়ে ছটা নাগাদ বলবন্ত সিংয়ের হোটেলে দেখা হবে।"
প্ল্যান মোটামুটি ছকেই ফেলেছিলাম। ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে প্রভাত ফেরির ভিড়ে মিশিয়ে সুযোগ বুঝে "ভাগ সীতা ভাগ"। বাড়ি এসে আমার একটা জিন্স ও আরেকটা সাদা পাঞ্জাবি দিলাম, কনেকে পরার জন্য। আমার স্পেশাল বডি ও কোমড় হওয়ায় আমার পোশাক সহজেই ফিট। মেয়ে নিজে থেকেই বললো, "একটা ক্যাপ দাও তো।" চুলটাকে কেমন করে একটা বেঁধে ক্যাপ পড়তেই ব্যাস, হুট করে ছেলে না মেয়ে চেনাই দুস্কর।
দুজনে বেরিয়ে সোজা ক্লাবের কাছে। প্রভাত ফেরির জন্য লোকজন আসতে শুরু করেছে। বিশ্বস্ত কয়েকটা বন্ধুকে প্রভাত ফেরী সামলে নিতে বলে একটা হাওড়াগামী বাসে দুজনে আলাদা ভাবে উঠে গিরিশ পার্ক। সেখান থেকে এসপ্লানেড হয়ে ভবানীপুর।
ভোররাত থেকে পেটে একফোটা জলও পড়েনি। বললাম বিয়ের জন্য উপোস করতে হয়, তোরা কর। আমায় পেট পুজো করতে দে। জিলিপি ও কেশর চা দিয়ে পেট পুজো করে তবে কালীঘাট।
হালখাতার ভিড়ে গিজগিজ করছে চারদিক। তারই মধ্যে ক্লায়েন্ট ধরা নিয়ে ভগবানের ইজারাদারদের সে কি টানাটানি। একজন তো ধরেই চালু করে দিলেন "ওঁ গঙ্গে চ্ যমুনে চৈব, দোকানের নাম বলুন"............ "ধুর মশাই, হালখাতা না, বিয়ে।"
"দুজনের নাম গোত্র বলুন........... গোদাবরী সরস্বতীং …......"
কোষা-কুশি ছাড়া জলশুদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণ করতে ও তাই বলে বিয়ে দিতে বাপের জন্মে ওই একবারই দেখেছিলাম। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের ও মনে হয় কিছু একটা দেখা বাকি ছিল। "ছেলে-মেয়ে কই? দুজনকে নিয়ে পিছ পিছ আসুন।"
"বর-বউ আপনার সামনেই তো।"
জিন্সের প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও ক্যাপ পরিহিতা কনেকে দেখে পুরুত মশাই ছেলে ভেবে যে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দিয়েছিলেন, বাপের জন্মে সেটাও বোধহয় একবারই দেখেছি।
"দুজনের নাম গোত্র বলুন........... গোদাবরী সরস্বতীং …......"
কোষা-কুশি ছাড়া জলশুদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণ করতে ও তাই বলে বিয়ে দিতে বাপের জন্মে ওই একবারই দেখেছিলাম। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের ও মনে হয় কিছু একটা দেখা বাকি ছিল। "ছেলে-মেয়ে কই? দুজনকে নিয়ে পিছ পিছ আসুন।"
"বর-বউ আপনার সামনেই তো।"
জিন্সের প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও ক্যাপ পরিহিতা কনেকে দেখে পুরুত মশাই ছেলে ভেবে যে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দিয়েছিলেন, বাপের জন্মে সেটাও বোধহয় একবারই দেখেছি।
©সুব্রত চৌধুরী
ছবি - Zomato
ছবি - Zomato
Comments
Post a Comment