তালশাঁস সন্দেশ

তালশাঁস সন্দেশ অনেক দেখেছেন। কড়াপাকের তালশাঁস, সূর্যমোদকের জলভরা ও অন্য বহু জায়গায়। এই তালশাঁস সন্দেশটি অবশ্য নরমপাকের ও বরোদা, গুজরাটের।

কলকাতায় ভিআইপি সুইটস (উল্টোডাঙ্গা, সল্টলেক, লেকটাউন, জোড়ামন্দির, চিনার পার্ক) এ একটা কড়াপাকের তালশাঁস পাওয়া যেত, একটু বড় সাইজের। ৯৬-৯৭ সালে দাম ছিল পাঁচ টাকা প্রতি পিস। ওই সাইজটা এখন আর দেখি না।

তা এহেন মিষ্টি যদি আপনাকে খেতে বলা হয়, আধঘন্টায় কটা খেতে পারবেন? ৫-১০-২০। তার উপরে হলে একটু টাফ। আচ্ছা, পঞ্চাশ? সাথে এক গ্লাস জল দিলে? আর যদি বলি একশ?

না, আমার কলেজের সহপাঠী ও বন্ধু "বাঘের বাচ্চা"র ঘটনা নয় এটা। তবে, ইনিও বাচ্চা, মানে "বাচ্চা ভুত"। আমার ওই কি যেন বলে, ওই বয়সের বন্ধু, পাড়ার ছেলে। তালশাঁসের ব্যাপারে আসার আগে তার বায়োডাটা একটু দেখে নেওয়া যাক। পাড়ার পুজোর ভোগের খিচুড়ি, হালকা ধোঁয়া ওঠা প্রায় তরল, বালতি ধরে চুমুক দিয়ে শেষ করতে সক্ষম। অনুষ্ঠান বাড়িতে খান ৩০-৩৫ টি গলদা চিংড়ি, খান বিশেক পাতুরি খেয়েও তিনি সাবলীল ভাবে হাফ বালতি মাংস উড়িয়ে দিতে পারেন।
পাড়াতুতো এক দাদার বৌভাতে পরিচিত এক ক্যাটারার কাজ করছিল। বন্ধুরা একটু সন্ধ্যে সন্ধেই পৌঁছে গেছিলাম। অভিজ্ঞ নাসিকা রন্দ্রের গুনে তিনি অনুষ্ঠান বাড়িতে পৌঁছেই বললেন, ফিশ ব্যাটার ফ্রাই হচ্ছে। বৌদির হাতে গিফট ধরিয়ে সিধা রান্নার জায়গায়। ক্যাটারিংয়ের লোককে গিয়ে গোটা কয়েক ফিশ ব্যাটার ফ্রাই চাইতেই ভুল করে বসল ক্যাটারার। "এখানে কিছু হবে না, খেতে বসে যা পারিস খাবি।"
পেরেছিল বটে। ক্যাটারার কে কাঁদিয়ে দিতে। গোটা চল্লিশেক ব্যাটার ফ্রাই, আট দশ বার চিকেন বিরিয়ানি ও কিলো খানেক মটন খাওয়ার পর, ক্যাটারার যখন ভাবছে, এই বার হয়তো ‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ক্ষমা করবে, উনি তালশাঁস দেখে সেটাও গোটা চল্লিশেক উড়িয়ে দিলেন।
এহেন তালশাঁসের মতো শুকনো কড়াপাকের মিষ্টি খাওয়ার কথা চাউর হতে বেশি সময় নেয়নি। আমাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডার জায়গা ছিল জোড়ামন্দিরের ভিআইপি সুইটসের এর সামনে।
জোড়ামন্দিরে ভিআইপি রোডের উপর বিখ্যাত বিয়েবাড়ির (এখন ফুল ফ্লেজেড হোটেল ও ব্যাংকোয়েট) মালিকের ছেলে আমাদের ক্লাবেরই সিনিয়ার দাদা। লোটাস সিনেমার কাছে ওনাদের বহু পুরানো রংয়ের দোকানও আছে।
একদিন সন্ধ্যেবেলা দোকান থেকে ফেরার সময় আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে গেল। "বাচ্চা ভুত"কে ডেকে বলল - "তুই চল্লিশটা তালশাঁস খেলি কি করে?" সোজাসাপ্টা উত্তর - "জেদ করে ওতোগুলো ব্যাটার ফ্রাই না খেলে একশোটা খেতাম।"
"একশোটা তালশাঁস খেয়ে দেখাতে পারবি? ওই যে পাঁচটাকার টা? বাজি হবে?"
"বাজির কি আছে? যদি একশোটা খেয়ে নি, তো তুমি মিষ্টির দাম দেবে, না পারলে আমি দেব।"
দুটো ট্রে মিলিয়ে ১০৪ খানা মিষ্টি ছিল। আধঘন্টায় "বাচ্চা ভুত" যখন মাত্র এক গ্লাস জল সহ ৯৬টি শেষ করে ফেলেছেন, দাদাটি আর ওয়েট না করে একটি ৫০০ টাকার নোট বার করতেই উনি ট্রেতে অবশিষ্ট সবকটা হাতে তুলে বললেন "আরো কুড়ি টাকা দিয়ে দিও, প্লিস।"

©সুব্রত চৌধুরী

Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

পুজো ও বামুন