"ফার্স্ট কাউন্টার"


কথাটি শুনেই অনেক পাবলিকের কান খাড়া হয়ে গেছে। কেউ কেউ কলেজ জীবনের কথা ভেবে নস্টালজিক ও হয়ে পড়েছেন হয়তো। হ্যা, যা ভাবছেন, ঠিক তাই। কলেজ ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সময় বন্ধুর সিগারেটে ভাগ বসানোর মোক্ষম স্লোগান। ধরাতে দেখলেই চেঁচিয়ে ওঠো, কেল্লা ফতে। পুরোটাও বলবে না, শুধু "এফসি" বলেই খালাস। পিছনে আরো লোকজন থাকতো, "এসসি" ও "টিসি" মানে সেকেন্ড ও থার্ড কাউন্টার। 
যাদবপুর পলিটেকনিকে পড়াশোনা আমার। আমি সিভিল এ ছিলাম। ইন্সট্রুমেন্টেশনে একটা ছেলে ছিল (নাম টা উহ্য থাক), আমার তাসের পার্টনার। এমনিতে আমার খুব ভালো বন্ধু কিন্তু একটা ব্যাপারে ওকে সহ্য করতে পারতাম না। পয়সাকড়ি তো তেমন পকেটে থাকতো না তখন, তাই বেশিরভাগ সময় বিড়িই ভরসা ছিল। শুধু দুপুরে টিফিন খেয়ে একটা সিগারেট খাওয়াটা ফিক্সড ছিল। এবং সেখানেই গল্প। সিগারেটটা ধরাতে না ধরাতেই উনি উদয় হতেন "এফসি" (FC) চিল্লিয়ে। প্রথম প্রথম অতটা মনোযোগ না দিলেও কয়েকদিন বাদে থেকে ব্যাপারটা অসহ্য হয়ে দাড়ালো। আমায় লক্ষ্য রাখতো আর যে কোনায় গিয়েই সিগারেটটা ধরাই না কেন, বাবু ঠিক হাজির।
কি করি, কি করি, ভাবতে ভাবতে একটা উপায় বার করলাম। একদিন রাত্তিরে বাড়িতে বসে একটা সিগারেটের পিছন থেকে ফিল্টারটা আগে বার করলাম। তারপর কিছুটা মশলাও বার করলাম অতি সন্তর্পনে। গোটা দশেক দেশলাই কাঠি থেকে বারুদ ঝেড়ে সেই বারুদ সিগারেটের মধ্যে ভরে তারপর আবার মশলা ও ফিল্টার ঢুকিয়ে রেখে দিলাম। (মশলা বার করা ও আবার ভরার কায়দা কি করে শিখলাম, এই বিষয়ে আলোচনা করা বারণ)। ঠিক যে জায়গায় আগুন এলে আমার থেকে রোজ সিগারেটটা নেয়, তার থেকে একটু পিছনেই রেখেছিলাম বারুদ।
পরদিন, বুকপকেটে ওই সিগারেটটা নিয়েই টিফিন খেলাম ও তারপর যেই জ্বালিয়েছি, অমনি FC। আমিও একটা লালমোহনবাবু মার্কা দেতো হাসি দিয়ে অর্ধেক সিগারেট টেনে বাবু কে হ্যান্ডওভার করলাম। প্রথম ও দ্বিতীয় টান ঠিকঠাক হলেও তৃতীয় টানে বারুদে আগুন। বিশেষ কিছুই হয়নি, যে আগুন টা জ্বলেছিল, তাতে বাবুর গোফটা ঠিক মাঝবরাবর পুড়ে খালি জয়ে গেছিলো। ঠোঁট ও পুড়ে গেছিলো খানিকটা। কিন্তু ওই শেষ। ও অন্তত কলেজে আর কারোর থেকে ফার্স্ট কাউন্টার খায়নি কোনোদিন।
Statutory warning: Cigarette smoking is injurious to health and causes cancer. This post is not to endorse smoking but only to share some memories related to cigarette, as we Bengalis do not smoke cigarette, but eat it.
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক ও ক্যান্সারের কারণ। এই পোস্টটি কোনোভাবেই সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারে কাউকে উৎসাহ দেয়ার জন্য নয়। আমরা বাঙালিরা সিগারেটটাও খাই, তাই তার উপর কিছু স্মৃতিচারণ।
©সুব্রত চৌধুরী

Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

পুজো ও বামুন

তালশাঁস সন্দেশ