Posts

ফাস্টফুড

Image
"চট করে গোবিন্দ'র দোকানে যা তো। পিসিদের প্রত্যেকের জন্যে দুটো করে সিঙ্গারা আর একটা করে নিমকি নিবি। বাড়ির লোকের জন্যে একটা করে। আর দু রকমের সন্দেশ নিবি, দুটাকা পিস আর এক টাকা পিস, দুটোই একটা একটা করে, শুধু পিসিদের জন্যে। বুঝলি?" হ্যাঁ বলে ঘাড় নেড়ে বেরোতে যাবো, আবার পিছন থেকে ডাক। "আর শোন, যদি দেখিস সিঙ্গারা শেষ হয়ে গেছে, তাহলে নিমকি নেওয়ার দরকার নেই। ওখান থেকে শুধু মিষ্টি নিয়ে ফটিকের দোকানে চলে যাবি। আলুর চপ টা ওদের জন্যে দুটো করে আর পেয়াজি বা ফুলুরি, যেটা পাবি, সবার জন্যে একটা করে। মনে থাকবে? আর ওদের মুখের গোড়া দিয়ে যাস না। খিড়কির দোর দিয়ে যা!" আটের দশক অবধি শহরতলী বা মফস্বল এলাকার বাঙালির "ফাস্টফুড"এর বৈচিত্র বলতে এটাই ছিল মোটামুটি। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসার আগে ফোন করার ব্যবস্থাই ছিল না। ফলে সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে কেউ এলে চটজলদি (fast) কিছু খাবারের (food) ব্যবস্থা কেই তখন ফাস্টফুড বলে জানতাম। কারণ, বেরোনোর সময় লাস্টে কানে আসতো, "পা গুনে গুনে হাটিস না আবার, দৌড়ে যাবি, ছুটে আসবি।" ধীরে ধীরে নগরায়নের বহর বৃদ্ধি হতে শুরু করায় ও...

গনাদার জামাইষষ্ঠী

Image
লকডাউনের বাজারে যাদের "ডাকাবুকো জামাই" আখ্যা দিয়ে "এলিজিবল ফর জামাই ষষ্ঠীর খ্যাটন" বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, এ হচ্ছে তেমনই এক জামাইয়ের কাহিনী। আমাদের গনাদা। গনাদা পাড়ার মধ্যেই প্রেম করেছিল। ক্লাবের ঠিক পাশের বাড়িতে ভাড়া এসেছিল বৌদি, থুড়ি, তখন মাম্পি দি। ক্লাবে ক্যারম খেলার সময় গনাদা ঠিক জানলার উল্টো দিকে দাড়াতো। সেই জানলা দিয়েই সামনের বারান্দায় দাড়ানো মাম্পী দির সাথে "আঁখো হি আঁখো মে ইশারা হো গ্যয়া"। কিন্তু মুশকিল টা হল, চিরাচরিত কেস, হিরোইনের বাবা ভিলেন। না, মানে ঠিক ভিলেন না, তবে রাম লখন সিনেমার মাধুরীর বাবা অনুপম খের টাইপ। জেঠু ব্যাংক ম্যানেজার হলে কি হবে, হেব্বি কিপ্পু, দুর্গাপুজোয় পাড়ার সবাই যখন গড়পড়তা একশ টাকা চাঁদা দেয়, উনি প্রথমবার এসে ১০ টাকা ঠেকালেন। গনাদা একা থাকলে হয়ত ওটা নিয়েই চলে আসত, কিন্তু বাকিরা নাছোড়বান্দা। অনেক বলে কয়ে বুঝিয়ে বাঝিয়েও শেষমেষ ১৮ টাকার বেশি সেটা ওঠেনি। যুক্তিগুলো যদিও অসাধারণ ছিল। বাড়িওয়ালা ১০০ টাকা চাঁদা দিলে ভাড়াটে হিসেবে ওনার হাফ হওয়া উচিত। তাহলে অন্তত পঞ্চাশ টাকা দিন। উহু, সবে তিন মাস এসেছি,...

অনিমন্ত্রিত

Image
"এই ভাই! আপনার নাম কি? কোথায় বাড়ি?" - বিয়েবাড়িতে খেতে বসে, এমন প্রশ্ন শুনে লোকজনকে ঢোক গিলতে দেখেছেন? এখনকার বিয়েবাড়ি গুলোতে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা অধিকাংশ জায়গায় বুফে হয়ে যাওয়ায় একটা শিল্পকলা লুপ্তপ্রায় পর্যায়ে চলে গেছে। অপরিচিত কোনো বিয়েবাড়িতে ঢুকে খেয়ে আসার শিল্পকলা। মানছি, বিনা নিমন্ত্রণে বুফে তে ঢুকেও লোকজন খেয়েই আসে, হয়তো আগের থেকে বেশিই, থ্রি ইডিয়েটস সিনেমার মত। কিন্তু বিয়েবাড়ির ভিড়ে ভালো ড্রেস পড়ে বুফের কাউন্টার থেকে প্লেট নিয়ে যে টুকু ইচ্ছা খেয়েই চলে আসা যায়। বা খেতে খেতে কেউ সন্দেহের চোখে দেখলে, প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে, ঘুরে অন্য দিকের ভিড়ে মিশে গিয়ে প্লেট রেখে বেরিয়ে আসার মধ্যে সেই থ্রিল টা নেই মশাই। থ্রিল তো তখন ছিল, যখন মাঠের মধ্যে বিয়েবাড়ির প্যান্ডেলে ঢুকে লম্বা টেবিলের ব্যাচে একসাথে বসে খেতে হত। হায়ার করা ক্যাটারারের সার্ভিং বয় না, পরিবেশন করতো পরিবারের সদস্য বা পাড়ার ছেলেরা, খাওয়ার মধ্যে একবার হলেও গৃহকর্তা এসে কথা বলে আপ্যায়ন করে যেত। এদের মধ্যে কেউ সন্দেহের চোখে দেখছে, বুঝতে পারলেও , স্বাভাবিক হয়ে পুরো ব্যাচের স...

গোত্রান্তর (অনুগল্প)

দিদির হাতের বানানো টুকটাক মুখরোচক খাবার গুলো খেতে খুব ভালোবাসতো অজয়। কিন্তু গোঁড়া ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে অনিতা বাড়ির অমতে কায়স্থ ছেলেকে বিয়ে করায়, তার হাতের রান্না তো দুরস্ত, জল ও কেউ খায়না এই বাড়িতে। কিশোর অজয় মা - বাবা, ঠাকুর্দা ঠাকুমা কে জিজ্ঞেস করেছিল, কেন? সবাই একটাই কথা বলত বাড়িতে, "কায়স্থ ছেলেকে বিয়ে করেছে, গোত্রান্তর হয়ে সে এখন কায়স্থ। আর এ বাড়িতে কেউ ব্রাহ্মণের হাতের রান্না ছাড়া কিছু খায় না, তাই ওসব অনাচার চলবে না। স্বামী নিয়ে বাপের বাড়ি আসায় কোনও বাঁধা দেইনি, এই ঢের।" এক যুগ কেটে গেছে, অজয়ের ঠাকুর্দা পরলোকগমন করেছেন বছর তিনেক আগে। বাড়িতে, অজয়ের বিয়ের কথা উঠতেই, অজয় নিজের পছন্দের কথা জানালো। সুমিতা, ওর সহকর্মী, দুজন একই অফিসে কাজ করে। সাথে সাথে মা - বাবা - ঠাকুমার প্রশ্নবাণ, "ব্রাহ্মণ?" - "না, তোমাদের হিসেবে, বদ্যি। আমার হিসেবে মানুষ।" - "কিন্তু, তা কি করে হয়? বদ্যি বাড়ির মেয়ে এসে আমাদের বাড়ির ঠাকুরঘরে, রান্নাঘরে ঢুকবে, তার হাতের ছোয়া জল আমাদের খেতে হবে? এসব অনাচার চলবে না।" - "এতো ছোয়া ছুইর বাতিক থা...

মহিষাসুরের ব্লগ থেকে

Image
আমার দুঃখু টা কেউ বুঝলো না মাইরি, সবাই শুধু মা কে নিয়ে পড়ে আছে। বলি মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থাকে সারাটা বছর, বাপের বাড়ি আসে বছরে এক দু বার (স্প্রিং (বসন্ত) ভ্যাকেশন এর টা ভুলে যাস না), তাই মা দুগ্গা র বাড়ি আসা নিয়ে জিয়া নস্টাল হতেই পারে, কিন্তু আমি খলনায়ক কেন বে? আমি কি করেছিলাম বল? দেবতারা গুড গভার্ন্যানস দিতে পারছিল কি? চপ শিল্প, পকোড়া শিল্প, এই দিয়ে কি চাকরি বাকরি জুটতো? নিজেরা হাত বাড়ালেই খাবার পাবে, আর বাকিরা কি দোষ করলো রে? নিজেরা সন্ধ্যে নামলে "ঢুকু ঢুকু ঢালিনি ও নাচ্ দেখি মালিনী", আর এদিকে পাবলিক যায় ভাড় মে? নিজেরা পার্সোনাল প্লেন হেলিকপ্টার রাখবে, আর জনগন ট্রাম বাসে বাদুরঝোলা? নিজেরা তো অমৃত খেয়ে বসে আছে, এদিকে ভেজাল ওষুধ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছাড়া গ্রামীণ হাসপাতাল, ইয়ার্কি হচ্ছে? কুবেরকে দিয়ে ব্ল্যাক মানি দুধ সাদা করিয়ে নিয়ে পাবলিককে সুইস ব্যাংকের ললিপপ দেখাবে? কাউকে না কাউকে তো রেবেলিয়ন হতেই হত বল। সেটা করতেই তো স্বর্গ রাজ্যে গেলাম, দিলাম খেদিয়ে। কি ভুল করেছিলাম বল? তোদের মতই তো বাপু ঘর ছেড়ে, নিজের শহর ছেড়ে, মায় দেশ ছেড়ে গেছিলাম ওখানে। যাতে সবাই...

পূজোর চাঁদা

Image
চাঁদনী থেকে হাটতে হাটতে হিন্দ সিনেমার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ করে থমকে দাড়ায় সঞ্জয়। ঠিক দেখছে?? কিন্তু এত চড়া মেকআপ, এমন উগ্র সাজ-পোশাক, এটা কি রীনা দি?? সেই, পাড়ার রীনা দি? কিন্তু, সে তো আজ বছর চার পাঁচেক আগের কথা। সঞ্জয় সে বছর মাধ্যমিক দেবে, ফাল্গুন মাসে রীনার বিয়ে হয়। ছেলের মুদিখানার দোকান, বড় ভাইয়ের সাথে একসাথে অবশ্য। কিন্তু বিয়ের পাঁচ মাসের মধ্যেই স্বামী মারা যায়, আর রীনাও মাসখানেক বাদেই বাপের বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু, ওই, অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। বাড়ি ফিরে বাপের কাছে ঠাই মিললেও ফিরে আসার বছরখানেকের মধ্যেই একটা বাস দুর্ঘটনায় বাবা মাও মারা গেল। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অল্পশিক্ষিতা বিধবা মেয়েটা দাদার সংসারেই ছিল, বিনা পয়সার কাজের লোক, দু বেলা দুমুঠো খাবার। যদিও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই রাক্ষসী, ডাইনি বলত পিঠ পিছে, কিন্তু তাও চুপচাপ মুখ বুজে দাদার সংসারেই পরে থাকতো রীনা। হঠাৎ করেই তার পরের বছর পূজোর সময় থেকে আর রীনা কে কেউ দেখতে পায় না। তার কদিন আগেই দাদা বৌদির সাথে ঘুরতে গেছিল দীঘায়, কিন্তু ফিরে আসার কদিনের মধ্যেই, নবমীর রাতে কোথায় যেন ...

চিত্রনাট্য

Image
চিত্রনাট্য।। Disclaimer - The incidents and characters are a work of fiction and Resemblance to any person living or dead is purely coincidental. অতীতের নামকরা হিরোইন ও আজকের নামী ফিল্ম ডাইরেক্টর শ্রীমতী অদিতি সিনহা, আজ নিজের ড্রইং রুমে বসে, হুইস্কির গ্লাসটা শক্ত করে ধরা ডান হাতে। এমনিতে চার পাঁচ পেগে ওনার নেশা কোনোকালেই হয় না, কিন্তু আজ কেমন যেন পুরানো কথাগুলো মনে পড়ছে। নেশা হয়েছিল সেদিন, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে খালি হাতে ফিরেছিলেন যেদিন। সেদিনের পর যেমন কিছু বিবৃতি দিতে হয়েছিল, আজও সেরকম একটা বিবৃতি দিয়েই বাড়ি এসেছেন। নিজের সিনেমার মতই ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলেন উনি, বছর পনের পিছনে। ----------------- * ------------------------- রাজ্যটার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে দুর্নাম বহুদিনের। অবশ্য সাহিত্য, সংস্কৃতি, সিনেমা তে সুনামটা এখনও কিছুটা রয়ে গেছে। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বোধিসত্ত্ব ব্যানার্জি তাই এবার জোর দিয়েছেন ভারী শিল্পে বিনিয়োগ আনার, যাতে রাজ্যবাসীর জন্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। নিজে সিনেমা সাহিত্য প্রেমী, সংস্কৃতি দপ্তরও নিজের হাতে তবুও ওই সব খাত...