গোত্রান্তর (অনুগল্প)

দিদির হাতের বানানো টুকটাক মুখরোচক খাবার গুলো খেতে খুব ভালোবাসতো অজয়। কিন্তু গোঁড়া ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে অনিতা বাড়ির অমতে কায়স্থ ছেলেকে বিয়ে করায়, তার হাতের রান্না তো দুরস্ত, জল ও কেউ খায়না এই বাড়িতে। কিশোর অজয় মা - বাবা, ঠাকুর্দা ঠাকুমা কে জিজ্ঞেস করেছিল, কেন? সবাই একটাই কথা বলত বাড়িতে, "কায়স্থ ছেলেকে বিয়ে করেছে, গোত্রান্তর হয়ে সে এখন কায়স্থ। আর এ বাড়িতে কেউ ব্রাহ্মণের হাতের রান্না ছাড়া কিছু খায় না, তাই ওসব অনাচার চলবে না। স্বামী নিয়ে বাপের বাড়ি আসায় কোনও বাঁধা দেইনি, এই ঢের।"

এক যুগ কেটে গেছে, অজয়ের ঠাকুর্দা পরলোকগমন করেছেন বছর তিনেক আগে। বাড়িতে, অজয়ের বিয়ের কথা উঠতেই, অজয় নিজের পছন্দের কথা জানালো। সুমিতা, ওর সহকর্মী, দুজন একই অফিসে কাজ করে। সাথে সাথে মা - বাবা - ঠাকুমার প্রশ্নবাণ, "ব্রাহ্মণ?"
- "না, তোমাদের হিসেবে, বদ্যি। আমার হিসেবে মানুষ।"
- "কিন্তু, তা কি করে হয়? বদ্যি বাড়ির মেয়ে এসে আমাদের বাড়ির ঠাকুরঘরে, রান্নাঘরে ঢুকবে, তার হাতের ছোয়া জল আমাদের খেতে হবে? এসব অনাচার চলবে না।"
- "এতো ছোয়া ছুইর বাতিক থাকলে দাদুকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে, বাড়িতে ব্রাহ্মণ আয়া দিয়ে সেবা করালেই পারতে। তখন সেটা অনাচার হয় নি?"
- "ফালতু যুক্তি দিয়ে লাভ নেই অজয়। আমরা আমাদের কথা বলে দিয়েছি।"
- "সুমিতাকে অপমানিত করার জন্যে বিয়ে করে এই বাড়িতে আনার কোনো ইচ্ছা নেই আমার, বিয়ের পরে অন্যত্র থাকবো আমরা। সম্পর্ক রাখা বা না রাখা তোমাদের হাতে, সপ্তাহান্তে আমি একবার করে বাড়ি আসবো, যদি না তোমরা আপত্তি করো। তাও যাওয়ার আগে তোমাদের যুক্তি দিয়েই তোমাদের একটা কথা বলে যাই?"
- "বল।"
- "জামাইবাবুরা কায়স্থ বলে দিদি নাকি গোত্রান্তর হয়ে আজ ব্রাহ্মণ থেকে কায়স্থ। তাহলে সুমিতা, বিয়ের পর, তোমাদের সেই হিসেব অনুযায়ী, গোত্রান্তর হয়ে বদ্যি থেকে ব্রাহ্মণ হবে না কেন?"

নিস্তব্ধ ঘর থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসে অজয়।

সুব্রত চৌধুরী 

Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

তালশাঁস সন্দেশ

পুজো ও বামুন