মহিষাসুরের ব্লগ থেকে

আমার দুঃখু টা কেউ বুঝলো না মাইরি, সবাই শুধু মা কে নিয়ে পড়ে আছে। বলি মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থাকে সারাটা বছর, বাপের বাড়ি আসে বছরে এক দু বার (স্প্রিং (বসন্ত) ভ্যাকেশন এর টা ভুলে যাস না), তাই মা দুগ্গা র বাড়ি আসা নিয়ে জিয়া নস্টাল হতেই পারে, কিন্তু আমি খলনায়ক কেন বে?

আমি কি করেছিলাম বল? দেবতারা গুড গভার্ন্যানস দিতে পারছিল কি? চপ শিল্প, পকোড়া শিল্প, এই দিয়ে কি চাকরি বাকরি জুটতো? নিজেরা হাত বাড়ালেই খাবার পাবে, আর বাকিরা কি দোষ করলো রে? নিজেরা সন্ধ্যে নামলে "ঢুকু ঢুকু ঢালিনি ও নাচ্ দেখি মালিনী", আর এদিকে পাবলিক যায় ভাড় মে? নিজেরা পার্সোনাল প্লেন হেলিকপ্টার রাখবে, আর জনগন ট্রাম বাসে বাদুরঝোলা? নিজেরা তো অমৃত খেয়ে বসে আছে, এদিকে ভেজাল ওষুধ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছাড়া গ্রামীণ হাসপাতাল, ইয়ার্কি হচ্ছে? কুবেরকে দিয়ে ব্ল্যাক মানি দুধ সাদা করিয়ে নিয়ে পাবলিককে সুইস ব্যাংকের ললিপপ দেখাবে? কাউকে না কাউকে তো রেবেলিয়ন হতেই হত বল। সেটা করতেই তো স্বর্গ রাজ্যে গেলাম, দিলাম খেদিয়ে। কি ভুল করেছিলাম বল?

তোদের মতই তো বাপু ঘর ছেড়ে, নিজের শহর ছেড়ে, মায় দেশ ছেড়ে গেছিলাম ওখানে। যাতে সবাই একটু সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। তোরা যাস নি? ঘর থেকে দূরে, মা বাপ ছেড়ে, বুকে পাথর চাপা দিয়ে পড়ে নেই তেপান্তরে? সবাই যখন পুজো পুজো করে আনন্দে ব্রেক ড্যান্স করছে, তখন তুই ছুটির জন্যে বসের পিছনে দৌড়াচ্ছিস। লিভ স্যান্কসান হলে বাড়ি আর নয়ত প্রজেক্টের বোঝা মাথায় চুপ করে ওখানেই পড়ে আছিস। বউ বা বর, যদি বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বাড়ি যেতে পারলো তো তাও ভালো, নয়ত বাড়ি ফিরলেই রোজ রাতে দু একটা স্কাড মিসাইল নিশ্চিত। এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে নো ইনক্রিমেন্ট, নো লিভ। তার উপর ট্যাক্স দিয়েও এই তো পরিষেবার ছিরি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে শেষমেষ মুক্তির দাবিতে যদি এর বিরুদ্ধে মাথা তুলিস, আর এইচআর থেকে সুপার বস পাঠিয়ে যদি পিঙ্ক স্লিপ ধরায় এবং সুপার বসেরই জয়জয়কার হয়, কেমন লাগবে বল!! ভিলেন না বানিয়ে অন্তত ট্র্যাজিক হিরোর তকমা তো দিতে পারিস আমাকে।

আমার বস ছিল আমার বিবেক। প্রজেক্ট গুড গভার্ন্যানস। চেষ্টা একটা চালিয়েছিলাম, সবার জন্যে, বিশ্বাস কর, কিন্তু ভিলেন বানিয়ে দিল মাইরি। কি করেছিলাম? কোন দেবতার মেয়ে বউ কে টোন টিটকিরি করেছিলাম? বা কোন অপ্সরার হাত ধরে টেনেছিলাম? অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিলাম? নাকি .......... থাক আর বললাম না, তোদের মধ্যেই কিছু কিছু পাবলিক যা শুরু করেছিস মাইরি, আমি তো তার কাছে শিশু ছিলাম বে। এমনি পারলো না বলে শেষ অবধি মা দুগ্গা কে পাঠালো, ওই সাদা দাড়ির দেবতার বর এর ফাঁক খুঁজে।

একটা কথা ভুলে যাস না, আমি ছিলাম বলেই কিন্তু মা দুগ্গা এত ফেমাস হল। মা দুগ্গা'র সাথে আমিও তো আসি নাকি। (জেন্ডার বায়াসনেস দেখাস না গেনু আর কেতো কে দেখিয়ে, ওরা অ্যাডাল্ট না, মায়ের সাথে মামাবাড়ি আসে।) এখন তো আর শুধু মেয়ে টা বাড়ি আসে তা নয়, ছেলে মেয়ে সবই তো বাড়ি থেকে দূরে থাকে। কেউ আসতে পারে, কেউ পারেনা। পরের বছরের আশায় বুক বাঁধে। আমি তো তাদেরই প্রতিনিধি।

ওই কটা দিন সব ভুলে মেরে দিলেও ছুটি শেষ হলেই কিন্তু আবার তেপান্তর, অফিস। পেট্রল ডিজেল এর দাম, ইনফ্লেশন (সে যতই ম্যানিপুলেশন করুক, সত্যি তো জানিস), নারী নির্যাতন ও সর্বোপরি সেই গুড গভার্ন্যানস নিয়ে ফেসবুক এ তো চে গুয়েভারা হয়ে উঠবিই উঠবি তোরা সব।

জানি, অল্প হলেও তোদের আমার প্রতি ভালোবাসা আছে। সেটা আমি হ্যান্ডসাম হান্ক বলে কিনা জানি নে, তবে বরণের সময় আমার মুখেও তো ভালই মিষ্টি ঠুসে দিস। কিছু কিছু পাবলিক তো আমার মাথায় ধান দুব্বো দিয়ে আশির্বাদও করে যায়। তাই বলছিলাম কি, সেলিব্রেট করতে হলে মায়ের সাথে আমার আগমন এর দিকটাও একটু মাথায় রাখিস।

পুনঃ - ওই ফালতু ভিতরের অসুর মারার গল্প শোনাবি না, আগেই বলেছি তোদের কিছু কিছু বন্ধু বান্ধব, প্রতিবেশী বা চেনা পরিচিতের কাছে আমি বাচ্চা।

মহিষাসুর স্যার এই বস্তাপচা লেখাটার কপিরাইট Subrata Chaudhuri কে দান করেছেন।

Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

তালশাঁস সন্দেশ

পুজো ও বামুন