Posts

Showing posts from September, 2018

এক রাতের বৃষ্টি - কলকাতা জলমগ্ন।।

Image
জীবনটাকে ঠিক ১৯ বছর রিউইন্ড করে নিন। ১৯৯৯ সাল। খুব সম্ভবত দিনটা ছিল ২৩ শে সেপ্টেম্বর। সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। মাঝে মাঝে এক আধ পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেল থেকে যে বৃষ্টি নামলো, তা আর থামলো না। সন্ধ্যের থেকে বৃষ্টির বেগ বাড়তে শুরু করল, ঝিরঝির থেকে ঝমঝম। আমাদের এলাকায় এমনিতেই জল জমার ইতিহাস আছে। ভিআইপি রোডের পাশের খাল আসতে আসতে বুজে এসেছিল, ফলে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পাড়ায় জল জমে যেত, তবে ভিতরের দিকে, আমাদের বাড়ির পর থেকে। আমাদের বাড়ির কাছে রাস্তার উপর জল আসতো না তেমন। বাবা - মা - ঠাকুমার কাছে শোনা ১৯৭৮ এর সময় ও বাড়ির উঠোনে জল জমলেও ঘরের মেঝেতে জল ওঠেনি। তখন অবশ্য একতলা ছিল বাড়িটা। ভিআইপি রোডের উপর পাড়ার মুখেই আমাদের ক্লাব, ক্যারাম খেলে রাত্রিবেলা ছাতা মাথায় বাড়ি ফিরতে গিয়েও ভিজে গেলাম। বাড়ি ঢোকার সময় পাড়ার ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তায় জল জমতে শুরু করেছে। আকাশভাঙা বৃষ্টি দেখে তখনই মনে কু ডাক দিল। বাড়ি ফিরে খেয়েই শুয়ে পড়লাম। কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না, দরজায় ধাক্কার আওয়াজ। বাবা ডাকছে। রাত সওয়া তিনটে। তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে ডাইনিং হলে আসতেই দেখি সিড়ির আলো জ্বলছে...

প্রথম চাকরি।।

Image
প্রথম চাকরি।। ১৯ বছর আগে, ১৯৯৯ সাল। ডিপ্লোমা শেষ, ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বেরোয় নি। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ইয়ারের রেজাল্ট দিয়েই নানা জায়গায় অ্যাপ্লাই করা চলছে। তখনও ইন্টারনেট এবং ইমেল এর রমরমা চালু হয় নি। একে তাকে ধরে ও টেলিফোন ডাইরেক্টরি দেখে বিভিন্ন ছোট বড় কোম্পানির ঠিকানা জোগাড় করাটা একটা সুবিশাল কাজ। তারপর হাতে লিখে, খামে ভরে সেই চিঠি পোস্ট করে বসে থাকো, কবে উত্তর আসবে তার আশায়। বেশিরভাগ কোম্পানি কোনো উত্তর দিত না। কেউ কেউ তো অফিসে ডেকেও ইন্টারভিউ না নিয়েই মুখের উপর না বলে দিত। শেষ অবধি একটি ডিজাইন কনসালট্যান্সি কোম্পানির অফিস থেকে চিঠি এলো। ইন্টারভিউ। যথা সময়ে হাজির হলাম, মালিক ভদ্রলোক রেজাল্টে চোখ বুলিয়ে বললেন "তুমি তো বাবা ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বেরোলেই কনডেন্সড বি ই পড়তে চলে যাবে। তোমায় চাকরি দিয়ে কি লাভ হবে বল?" "না স্যার, আমি কনডেন্সড বি ই পড়বো না। AMIE করব তাই চাকরি ছাড়বো না। ডিজাইনের কাজ শিখতে চাই শুধু।" "কিন্তু মাইনে বেশি কিছু দিতে পারবো না। সোম থেকে শুক্র অফিস, মানে মাসে ২০ দিন। বাগুইআটি থেকে মল্লিকবাজার এক পিঠের বাস ভাড়া ...

বিশ্বকর্মা পুজো

Image
বিশ্বকর্মা পুজো মানে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। আগস্ট মাসের প্রথম থেকেই চালু হয়ে যেত বিকেলবেলা ঘুড়ি ওড়ানোর পালা। আগের বছরের বেঁচে যাওয়া মাঞ্জা সুতো দিয়েই চলত মহড়া। মাধ্যমিকের আগে যেমন টেস্ট পরীক্ষা হতো, তেমনই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে পনেরোই আগস্ট। বরাহনগরের দিকে কিছু বন্ধু বান্ধব ছিল, সেখানে গিয়ে একটু হাত ঝালিয়ে আসা। পুরানো মাঞ্জার জোর কমে গিয়ে থাকলে, চটজলদি চড়কায় মাঞ্জা দিয়ে নিতাম। আসল প্রস্তুতি চালু হতো বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পাঁচেক আগে থেকে। মোটা কাঁচের শিশি বোতল জোগাড় করতে হতো। হরলিক্স আর ভিভার বোতলের চাহিদা ছিল সবচাইতে বেশি। হামানদিস্তায় মোটা কাঁচ গুড়ো করে ধুতির কাপড়ে ছেকে পুঁটলি করে রেখে দিতাম। দু দিন আগে সাবু, আরারুট ও শিরীষ গাছের ছাল জ্বাল দিয়ে তাকে ঠান্ডা করতে হতো। ঠান্ডা হলে মেশানো হতো কাঁচের গুড়ো। আমি রং মেশতাম না। তারপর তিন চারজন বন্ধু মিলে চালু মাঞ্জা দেওয়া, দুপুরের কাঠ ফাটা রোদে। দুটো লাইট পোস্ট ছিল বাড়ির সামনে। একটা কচি কাঁচা কে দেওয়া হতো সাদা সুতোর রিল। তার পিছনে দুই থেকে তিনজন সাবুর কাই মাখাতে মাখাতে চলতাম আর শেষে একজন টিপ ধরতাম। টিপ ধরা টাই হলো মেন ব্যাপার। ...

ইঞ্জিনিয়ার্স ডে

Image
আজ ইঞ্জিনিয়ার্স ডে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশের প্রায় সব প্রান্তেই মাঠে ঘাটে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ঝুলিতে। তবে সবচাইতে অ্যাডভেঞ্চারাস ও থ্রিলিং লাইফ বোধহয় লাঞ্জিগড় - কালাহান্ডি, উড়িশ্যা তেই কাটিয়েছি। কাজ শিখেছি যেমন, তেমনই সাপ ব্যাঙ পিপড়ের ডিম থেকে বুনো শুয়োর, অনেক কিছুই খেয়েছি ওখানে থাকাকালীন। কংক্রিটের চিমনি বানানোর কাজ শিখে ছিলাম ওখানেই। তেমনই অত উচুতে কাজ করতে করতে অনেক রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে জীবনে। খুব সম্ভবত মার্চ মাস, ২০০৫। নাইট শিফট এ ছিলাম। মানে রাত আট টা থেকে সকাল আট টা। চিমনির হাইট তখন ১২০ মিটারের কাছাকাছি হবে। সকাল পৌনে আট টা নাগাদ ডে শিফট এর ইঞ্জিনিয়ার এলো উপরে, কাজ বুঝে নিতে। অধিকাংশ ওয়ার্কার নেমে গেছে। কিছু টেকনিশিয়ান ও আমরা দুজন ইঞ্জিনিয়ার উপরে। খালি লিফট (winch) উপরে আসছিল, আমি নামব বলে। হঠাৎ প্যানেল বোর্ডে ফ্ল্যাশ এবং লিফট আটকে গেল। কংক্রিটের উইঞ্চ টাও চলছিল পরিষ্কার করবে বলে, তার প্যানেল বোর্ড ও জ্বলে গেল। বাইরের রড ওঠানোর উইঞ্চ এর দিকে তাকাতে তার অপারেটর ও একই সিগন্যাল দিল। বুঝতে পারলাম, ফেঁসে গেছি, নিচে নামার উপায় নেই আপাতত, যতক্ষণ না উইঞ্চ ঠিক হচ্ছ...

ছাঁদা বাঁধা

Image
আমাদের পাড়ায় এক অবাঙালি ভদ্রলোক বিশাল বাড়ি বানিয়ে এলেন। পাড়ার পুজো উপলক্ষে তাকে প্রথম বছরেই ভাইস প্রেসিডেন্ট বানানো হল মোটা টাকা চাঁদার আশায়। কিন্তু হরি হরায়েও। মহা কঞ্জুস, ওয়ান পাইস ফাদার মাদার। যথারীতি ক্লাবের সবাই ক্ষুব্ধ। ভদ্রলোকের বাড়ির পিছনের দেওয়ালটা ছিল আমাদের আড্ডাস্থল ও দেওয়াল সাটিয়ে কালীপুজোর প্যান্ডেলের জায়গা। পুজো মিটে যাওয়ার পরে আমাদের আড্ডা ও হই হল্লা একটু বেশি মাত্রায় বেড়ে গেল, বলাই বাহুল্য, তাকে জ্বালাতন করার উদ্দেশ্যে। মাঝে মধ্যে এসে অনুরোধ করে আস্তে কথা বলতে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। ভদ্রলোক ও ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন। শেষে আমাদের তুষ্ট করতে নিজে থেকেই ৩১ শে ডিসেম্বরের পিকনিক এর খরচা দেবেন বলে ঘোষণা করলেন। কিন্তু পিকনিকের দিন হঠাৎ বললেন "আমরা নিরামিষাশী, তাই মাংসের টাকাটা দেব না"। বুঝতেই পারছেন, এরপর আগ্নেয়গীরি র অবস্থা। কয়েকদিন বাদে ভদ্রলোক এলেন তার ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে। প্রথমে কেউ রাজি নয়, নিরামিষ খেতে, কে আর যেতে চায়। কিন্তু ছোটখাটো মিটিং করে ঠিক হল, ক্লাবের যত নাম করা খাইয়ে আছে, তাদের যেতেই হবে। এমন খাওয়া খেতে হবে, যাতে স...

গলানো সোনা

Image
"ও ফেলু বাবু, বলছি সোনার কেল্লার কেস তো সলভ করে দিলেন, এবার এদিকটাও একটু দেখুন।" "আবার কোন কেস?" "আরে, কি সব লেখা বেরোচ্ছে কাগজে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, গলানো সোনা - দেখেছেন??" রবিবারের বিকেলে কাগজের শব্দছক মেলাতে মেলাতে চোখ তুলে লালমোহন বাবুকে একবার মেপে নিলো ফেলুদা। কাগজটা হাত থেকে সেন্টার টেবিলে রেখে একটা চারমিনার জ্বালিয়ে ফেলুদা বলল "ওসব বিজ্ঞাপনের চমক। এর আগেও সর্ষের তেল কোম্পানি গুলো এই ভাবেই বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আপনার স্মৃতিশক্তি দূর্বল লালমোহন বাবু।" "তাহলে চিন্তার কিছু নেই বলছেন?" একটা দেতো হাসি দিয়ে জটায়ু ডাল মুটের দিকে হাত বাড়ালেন। ফেলুদা দুটো ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বলে উঠলো "আসল গলানো সোনা দেখেছেন কখনও?" "না, ইয়ে মানে, ব্যাপারটা....... হে হে, ওই সর্ষের তেল যদি বলেন, তাহলে হ্যা বলতে পারি।" "ধুর মশাই, সর্ষের তেল কে আমি গলানো সোনার হিসেবেই ধরি না। আমার মতে গলানো সোনা অন্য।" ক্যারমের স্টাইকারের মত করে চারমিনারের শেষ টা জানলার বাইরে ফেলে ফেলুদা বলল "ভাদ্র মাসে পাকা তাল দেখেছেন। বাড়ি এনে কা...