ছাঁদা বাঁধা
আমাদের পাড়ায় এক অবাঙালি ভদ্রলোক বিশাল বাড়ি বানিয়ে এলেন। পাড়ার পুজো উপলক্ষে তাকে প্রথম বছরেই ভাইস প্রেসিডেন্ট বানানো হল মোটা টাকা চাঁদার আশায়। কিন্তু হরি হরায়েও। মহা কঞ্জুস, ওয়ান পাইস ফাদার মাদার।
যথারীতি ক্লাবের সবাই ক্ষুব্ধ। ভদ্রলোকের বাড়ির পিছনের দেওয়ালটা ছিল আমাদের আড্ডাস্থল ও দেওয়াল সাটিয়ে কালীপুজোর প্যান্ডেলের জায়গা। পুজো মিটে যাওয়ার পরে আমাদের আড্ডা ও হই হল্লা একটু বেশি মাত্রায় বেড়ে গেল, বলাই বাহুল্য, তাকে জ্বালাতন করার উদ্দেশ্যে।
মাঝে মধ্যে এসে অনুরোধ করে আস্তে কথা বলতে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। ভদ্রলোক ও ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন। শেষে আমাদের তুষ্ট করতে নিজে থেকেই ৩১ শে ডিসেম্বরের পিকনিক এর খরচা দেবেন বলে ঘোষণা করলেন। কিন্তু পিকনিকের দিন হঠাৎ বললেন "আমরা নিরামিষাশী, তাই মাংসের টাকাটা দেব না"।
বুঝতেই পারছেন, এরপর আগ্নেয়গীরি র অবস্থা। কয়েকদিন বাদে ভদ্রলোক এলেন তার ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে। প্রথমে কেউ রাজি নয়, নিরামিষ খেতে, কে আর যেতে চায়। কিন্তু ছোটখাটো মিটিং করে ঠিক হল, ক্লাবের যত নাম করা খাইয়ে আছে, তাদের যেতেই হবে। এমন খাওয়া খেতে হবে, যাতে সে বুঝতে পারে, আমরা কি জিনিস।
শুভদিনে আমরা সবাই গিয়ে খেতে বসেছি। এবং আমাদের খাওয়া দেখে ভদ্রলোক একবার করে ভিতরে যাচ্ছেন আর ভাঁড়ারের অবস্থা দেখে কপালের ঘাম মুছে চলেছেন। মিনমিন করে একবার বলতে এসেছিলেন, কিন্তু "নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারেন না", এমন অপবাদের জন্যে মাঘ মাসেও কুলকুল করে ঘামতে শুরু করলেন। আমাদের সেদিকে খেয়াল নেই, আমরা নিরামিষ পনির মাশরুম, যা পাই, তাই সই। শেষ পাতে ছিল ইয়া বড় বড় কমলাভোগ / রাজভোগ। আমার মত চুনোপুটি যখন আট দশটা আত্মসাৎ করে ফেলেছে, তখন বুঝতেই পারছেন রাঘব বোয়ালরা কি অবস্থা করে ছেড়েছে। ভদ্রলোকের পক্ষে বোধহয় আর এই দৃশ্য সহ্য করা সম্ভব ছিল না। উনি হতোদ্যম হয়ে, রান্নার লোকজনকে নির্দেশ দিয়ে (আরো খাবার এর ব্যবস্থা করার) খাওয়ার জায়গা পরিত্যাগ করলেন।
আমাদের মধ্যে একজন ছিল প্রচণ্ড মিষ্টি প্রেমী। কিন্তু সে প্রথম থেকেই পনির মাশরুম এর দিকে এতটাই নজর দিয়েছিল, যে গোটা ছয়েক রাজভোগ খাওয়ার পর পাতে পরে থাকা চারটে রাজভোগ এর দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে ছিল। ভদ্রলোক নজরের আড়াল হতেই দুটো প্লাস্টিকের জলের গ্লাস থেকে জল ফেলে তার মধ্যে চারটে রাজভোগ ভরে উঠে পড়ল। বলল, "বাড়ি গিয়ে রসিয়ে রসিয়ে খাবো।"
দু হাতে দুটো প্লাস্টিকের গ্লাসে চারটে রাজভোগ নিয়ে বেরোতে যাবে, ঠিক সেই সময় ভদ্রলোকের মুখোমুখি। ভদ্রলোকের সেই অমোঘ বাংলা হিন্দি মিশ্রিত বাণী, আজও ভুলিনি।
"খাবিস, খাবিস, আবার লিয়েও যাবিস।"
©সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment