বিশ্বকর্মা পুজো
বিশ্বকর্মা পুজো মানে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। আগস্ট মাসের প্রথম থেকেই চালু হয়ে যেত বিকেলবেলা ঘুড়ি ওড়ানোর পালা। আগের বছরের বেঁচে যাওয়া মাঞ্জা সুতো দিয়েই চলত মহড়া। মাধ্যমিকের আগে যেমন টেস্ট পরীক্ষা হতো, তেমনই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে পনেরোই আগস্ট। বরাহনগরের দিকে কিছু বন্ধু বান্ধব ছিল, সেখানে গিয়ে একটু হাত ঝালিয়ে আসা। পুরানো মাঞ্জার জোর কমে গিয়ে থাকলে, চটজলদি চড়কায় মাঞ্জা দিয়ে নিতাম।
আসল প্রস্তুতি চালু হতো বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পাঁচেক আগে থেকে। মোটা কাঁচের শিশি বোতল জোগাড় করতে হতো। হরলিক্স আর ভিভার বোতলের চাহিদা ছিল সবচাইতে বেশি। হামানদিস্তায় মোটা কাঁচ গুড়ো করে ধুতির কাপড়ে ছেকে পুঁটলি করে রেখে দিতাম। দু দিন আগে সাবু, আরারুট ও শিরীষ গাছের ছাল জ্বাল দিয়ে তাকে ঠান্ডা করতে হতো। ঠান্ডা হলে মেশানো হতো কাঁচের গুড়ো। আমি রং মেশতাম না। তারপর তিন চারজন বন্ধু মিলে চালু মাঞ্জা দেওয়া, দুপুরের কাঠ ফাটা রোদে।
দুটো লাইট পোস্ট ছিল বাড়ির সামনে। একটা কচি কাঁচা কে দেওয়া হতো সাদা সুতোর রিল। তার পিছনে দুই থেকে তিনজন সাবুর কাই মাখাতে মাখাতে চলতাম আর শেষে একজন টিপ ধরতাম। টিপ ধরা টাই হলো মেন ব্যাপার। মোটামুটি এক একজনের হাজার (গজ) সুতো, সর্বমোট তিন বা চার হাজার।
পুজোর আগের দিন ওই মাঞ্জা থেকে অল্প নিয়ে টেস্ট করে দেখা হতো। ভালো হলে তো ভালোই, না হলে আস্তিন থেকে বেরোত ইস্কাপনের টেক্কা। এমনও আগের দিন গেছে, সন্ধ্যে থেকে ঘুড়ির কল বেঁধে, রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মাঝরাতে সেই ট্রাম্প কার্ড মাঞ্জা দেওয়া, ডিম মাঞ্জা, এক দিনের রাজা।
ঘুমোতে যত রাত্রি হোক না কেন, সকালে সূর্যি মামা ও আমাদের মধ্যে অলিখিত রেস চলত, কে আগে উঠবে। কোন মতে ব্রাশ করেই ছাতে। মাঝে দুটো ব্রেক, একটা জলখাবারের আরেকটা দুপুরের খাওয়া। সন্ধ্যেবেলা ছাত থেকে নামলে মা বাবাও চিনতে পারত না।
ধীরে ধীরে পাখা গজাতে শুরু করলো, মানে বড় হলাম। মাঞ্জা দেওয়ার খাটনি বেশি মনে হতে মাঞ্জা কেনা চালু হল। প্রথম কেনা মাঞ্জা ফড়িয়াপুকুর থেকে। হাতে দেওয়া মাঞ্জা। কলেজে উঠতে পাখা আরেকটু বড় হল। গন্তব্য লেবুতলা। লুদ্দি মাঞ্জা, মেশিনে দেওয়া। তারপর আলাপ হল এক ভদ্রলোকের সাথে, বর্ধমান থ্রেডস এর জিএম। উনি পাঠালেন মেটিয়াবুরুজ, ওনার কার্ড দিয়ে। ওনাদের থেকে সুতো নিয়ে বেরিলী পাঠিয়ে মাঞ্জা দিয়ে নিয়ে এসে কলকাতায় হোল সেল সাপ্লায়ার, "ময়দানি ধুলা মাঞ্জা"র। সে বছর থেকে সত্যিই নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হত, জিএম এর রেকমেন্ড করে দেওয়ায় বেস্ট মাঞ্জা বিনা লাভে আমাদের বিক্রি করতেন ওই হোলসেলার।
নিজেদের খাটনি কমানোর জন্যে আমরাই বোধহয় পরবর্তী প্রজন্মকে এই উৎসব এর আমেজ বোঝাতে পারলাম না। নিজে হাতে কাঁচ গুড়ো থেকে শুরু করে মাঞ্জা দিয়ে কাঁসর ঘন্টা বিউগেল নিয়ে ছাতে উঠে ঘুড়ি উড়ানোর ঝোঁক আজ আর নেই। শিকড় টা বোধহয় আমরাই কেটে দিয়েছি .......... ভোও কাট্টা......... ভো.....ভো......ভো......ভো....... কাট্টা
আসল প্রস্তুতি চালু হতো বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পাঁচেক আগে থেকে। মোটা কাঁচের শিশি বোতল জোগাড় করতে হতো। হরলিক্স আর ভিভার বোতলের চাহিদা ছিল সবচাইতে বেশি। হামানদিস্তায় মোটা কাঁচ গুড়ো করে ধুতির কাপড়ে ছেকে পুঁটলি করে রেখে দিতাম। দু দিন আগে সাবু, আরারুট ও শিরীষ গাছের ছাল জ্বাল দিয়ে তাকে ঠান্ডা করতে হতো। ঠান্ডা হলে মেশানো হতো কাঁচের গুড়ো। আমি রং মেশতাম না। তারপর তিন চারজন বন্ধু মিলে চালু মাঞ্জা দেওয়া, দুপুরের কাঠ ফাটা রোদে।
দুটো লাইট পোস্ট ছিল বাড়ির সামনে। একটা কচি কাঁচা কে দেওয়া হতো সাদা সুতোর রিল। তার পিছনে দুই থেকে তিনজন সাবুর কাই মাখাতে মাখাতে চলতাম আর শেষে একজন টিপ ধরতাম। টিপ ধরা টাই হলো মেন ব্যাপার। মোটামুটি এক একজনের হাজার (গজ) সুতো, সর্বমোট তিন বা চার হাজার।
পুজোর আগের দিন ওই মাঞ্জা থেকে অল্প নিয়ে টেস্ট করে দেখা হতো। ভালো হলে তো ভালোই, না হলে আস্তিন থেকে বেরোত ইস্কাপনের টেক্কা। এমনও আগের দিন গেছে, সন্ধ্যে থেকে ঘুড়ির কল বেঁধে, রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মাঝরাতে সেই ট্রাম্প কার্ড মাঞ্জা দেওয়া, ডিম মাঞ্জা, এক দিনের রাজা।
ঘুমোতে যত রাত্রি হোক না কেন, সকালে সূর্যি মামা ও আমাদের মধ্যে অলিখিত রেস চলত, কে আগে উঠবে। কোন মতে ব্রাশ করেই ছাতে। মাঝে দুটো ব্রেক, একটা জলখাবারের আরেকটা দুপুরের খাওয়া। সন্ধ্যেবেলা ছাত থেকে নামলে মা বাবাও চিনতে পারত না।
ধীরে ধীরে পাখা গজাতে শুরু করলো, মানে বড় হলাম। মাঞ্জা দেওয়ার খাটনি বেশি মনে হতে মাঞ্জা কেনা চালু হল। প্রথম কেনা মাঞ্জা ফড়িয়াপুকুর থেকে। হাতে দেওয়া মাঞ্জা। কলেজে উঠতে পাখা আরেকটু বড় হল। গন্তব্য লেবুতলা। লুদ্দি মাঞ্জা, মেশিনে দেওয়া। তারপর আলাপ হল এক ভদ্রলোকের সাথে, বর্ধমান থ্রেডস এর জিএম। উনি পাঠালেন মেটিয়াবুরুজ, ওনার কার্ড দিয়ে। ওনাদের থেকে সুতো নিয়ে বেরিলী পাঠিয়ে মাঞ্জা দিয়ে নিয়ে এসে কলকাতায় হোল সেল সাপ্লায়ার, "ময়দানি ধুলা মাঞ্জা"র। সে বছর থেকে সত্যিই নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হত, জিএম এর রেকমেন্ড করে দেওয়ায় বেস্ট মাঞ্জা বিনা লাভে আমাদের বিক্রি করতেন ওই হোলসেলার।
নিজেদের খাটনি কমানোর জন্যে আমরাই বোধহয় পরবর্তী প্রজন্মকে এই উৎসব এর আমেজ বোঝাতে পারলাম না। নিজে হাতে কাঁচ গুড়ো থেকে শুরু করে মাঞ্জা দিয়ে কাঁসর ঘন্টা বিউগেল নিয়ে ছাতে উঠে ঘুড়ি উড়ানোর ঝোঁক আজ আর নেই। শিকড় টা বোধহয় আমরাই কেটে দিয়েছি .......... ভোও কাট্টা......... ভো.....ভো......ভো......ভো....... কাট্টা
Comments
Post a Comment