ইঞ্জিনিয়ার্স ডে
আজ ইঞ্জিনিয়ার্স ডে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশের প্রায় সব প্রান্তেই মাঠে ঘাটে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ঝুলিতে।
তবে সবচাইতে অ্যাডভেঞ্চারাস ও থ্রিলিং লাইফ বোধহয় লাঞ্জিগড় - কালাহান্ডি, উড়িশ্যা তেই কাটিয়েছি। কাজ শিখেছি যেমন, তেমনই সাপ ব্যাঙ পিপড়ের ডিম থেকে বুনো শুয়োর, অনেক কিছুই খেয়েছি ওখানে থাকাকালীন।
কংক্রিটের চিমনি বানানোর কাজ শিখে ছিলাম ওখানেই। তেমনই অত উচুতে কাজ করতে করতে অনেক রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে জীবনে।
তবে সবচাইতে অ্যাডভেঞ্চারাস ও থ্রিলিং লাইফ বোধহয় লাঞ্জিগড় - কালাহান্ডি, উড়িশ্যা তেই কাটিয়েছি। কাজ শিখেছি যেমন, তেমনই সাপ ব্যাঙ পিপড়ের ডিম থেকে বুনো শুয়োর, অনেক কিছুই খেয়েছি ওখানে থাকাকালীন।
কংক্রিটের চিমনি বানানোর কাজ শিখে ছিলাম ওখানেই। তেমনই অত উচুতে কাজ করতে করতে অনেক রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে জীবনে।
খুব সম্ভবত মার্চ মাস, ২০০৫। নাইট শিফট এ ছিলাম। মানে রাত আট টা থেকে সকাল আট টা। চিমনির হাইট তখন ১২০ মিটারের কাছাকাছি হবে। সকাল পৌনে আট টা নাগাদ ডে শিফট এর ইঞ্জিনিয়ার এলো উপরে, কাজ বুঝে নিতে। অধিকাংশ ওয়ার্কার নেমে গেছে। কিছু টেকনিশিয়ান ও আমরা দুজন ইঞ্জিনিয়ার উপরে। খালি লিফট (winch) উপরে আসছিল, আমি নামব বলে। হঠাৎ প্যানেল বোর্ডে ফ্ল্যাশ এবং লিফট আটকে গেল। কংক্রিটের উইঞ্চ টাও চলছিল পরিষ্কার করবে বলে, তার প্যানেল বোর্ড ও জ্বলে গেল। বাইরের রড ওঠানোর উইঞ্চ এর দিকে তাকাতে তার অপারেটর ও একই সিগন্যাল দিল। বুঝতে পারলাম, ফেঁসে গেছি, নিচে নামার উপায় নেই আপাতত, যতক্ষণ না উইঞ্চ ঠিক হচ্ছে।
সারারাত ডিউটি করে খিদেয় পেট জ্বলছে। নিচে ইলেকট্রিশিয়ান দৌড়াদৌড়ি চালু করেছে। ওয়াকিটকী তে খবর পেলাম সিনিয়ার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার আসছেন। খবর দিলাম, কিছু খাবারের বন্দোবস্ত করতে। উত্তর এলো, "পাঠাবো কি করে?" সত্যিই তো, সব উইঞ্চ ই তো বিগড়েছে। পেটে গামছা বেঁধে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
সিনিয়ার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার এসে পরীক্ষা করে বললেন প্যানেল বক্স পুরোটাই জ্বলে গেছে প্রায়। নতুন পার্টস আনতে হবে। নিকটবর্তী টাউন ভবানিপাটনা (২ঘন্টা) আর তার বিপরীত দিকে বিসমকটক (২ঘন্টা)। না পাওয়া গেলে বলাঙ্গীর (৬ঘন্টা)। ভবানীপাটনা বা বিসমকটক এ ওই জিনিস পাওয়া যাবে না, সেটা আমি অনুমান করেই নিয়েছিলাম। বুঝতে পারলাম রাত্রের আগে মুক্তি নেই। তাই আপনা হাত জগন্নাথ।
সারারাত ডিউটি করে খিদেয় পেট জ্বলছে। নিচে ইলেকট্রিশিয়ান দৌড়াদৌড়ি চালু করেছে। ওয়াকিটকী তে খবর পেলাম সিনিয়ার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার আসছেন। খবর দিলাম, কিছু খাবারের বন্দোবস্ত করতে। উত্তর এলো, "পাঠাবো কি করে?" সত্যিই তো, সব উইঞ্চ ই তো বিগড়েছে। পেটে গামছা বেঁধে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
সিনিয়ার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার এসে পরীক্ষা করে বললেন প্যানেল বক্স পুরোটাই জ্বলে গেছে প্রায়। নতুন পার্টস আনতে হবে। নিকটবর্তী টাউন ভবানিপাটনা (২ঘন্টা) আর তার বিপরীত দিকে বিসমকটক (২ঘন্টা)। না পাওয়া গেলে বলাঙ্গীর (৬ঘন্টা)। ভবানীপাটনা বা বিসমকটক এ ওই জিনিস পাওয়া যাবে না, সেটা আমি অনুমান করেই নিয়েছিলাম। বুঝতে পারলাম রাত্রের আগে মুক্তি নেই। তাই আপনা হাত জগন্নাথ।
এইরকম পরিস্থিতির জন্যে চিমনির টপ ডেক এ ২০০ মিটার লম্বা রশি রাখা থাকে। লোহার রড তোলার পুলি (pulley) থেকে উইঞ্চ এর তার সাইডে ফেলে সেই রশি পড়ানো হল। তাতে কিছু ভারী লোহার টুকরো বেঁধে ধীরে ধীরে নিচে নামানো চালু হল রশি, যাতে কিছু খাবার অন্তত তাতে বেঁধে পাঠাতে পারে। কিন্তু পাঠাবে কি? অত তাড়াতাড়ি তো সাইটের ক্যান্টিনেও কিছু তৈরি হয় নি। ৬টা টেকনিশিয়ান ও আমার তখন খিদে তে চোখে অন্ধকার দেখার অবস্থা। ফেঁসে গেছি জেনে খিদে যেন বেশি করে পাচ্ছে।
লোক্যাল সুপারভাইজার ছিল একটা ছেলে, নাম ঢিকনা। সে দৌড়ে গিয়ে গেটের বাইরে থেকে দশ প্যাকেট ম্যাগী কিনে আনলো। ওয়াকিটকী তে জানালো, আমরা টেনে তুললাম। পানীয় জল ও রাত্রে চা গরম করার জন্যে একটা ডেকচি থাকতই উপরে। শুধু হিটার চলবে না। কুছ পরোয়া নেহি। লোহা কাটার গ্যাস কাটিং সেট দেখেছেন নিশ্চয়ই। অক্সিজেন ও এলপিজি দিয়ে জ্বালানো হয়। অক্সিজেন কমিয়ে অ্যাডজাস্ট করলে নরমাল আগুন বেরোবে। তাই দিয়ে বানিয়ে, সকাল নটায় মাটি থেকে ৩৯০ ফিট উচুতে বসে, ম্যাগী খাওয়ার অভিজ্ঞতা বোধহয় ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
সেদিন মুক্তি পেয়েছিলাম রাত দেড়টায়। সারাদিন ধরে অবশ্য বিরিয়ানী মাংস সহ অনেক কিছুই পাঠিয়েছিল কোম্পানি। আমাদের শুধু কষ্ট করে দড়ি টেনে উপরে তুলতে হয়েছিল। কিন্তু সেইদিন সকালের ওই ম্যাগীর স্বাদ জীবনেও ভুলব না।
©সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment