Posts

Showing posts from May, 2018

"ঘঞ্চা বুড়িটা"

Image
২৮শে মে, ২০১০। টাটা পাওয়ারের ইউনিট ফাইভ এ কর্মরত (টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স এর হয়ে)। মহারানী তখন কলকাতায়, ডেলিভারির ডেট জুনের ফার্স্ট উইক। সকাল সাড়ে ন'টা বাজে, ১৬১ মিটার উঁচু চিমনির কাজ চলছে, এমন সময় মহারানীর ফোন। "খবর দেখেছো?" "কি হয়েছে?" "ঝাড়গ্রামের কাছে বিশাল ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। খড়গপুর থেকে টাটানগরের মধ্যে সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ।" "তাই নাকি? কখন হল? কি করে? হতাহতের সংখ্যা কত?" "অনেক লোক মারা গেছে। কিন্তু তুমি দুর্ঘটনা ছেড়ে অন্য কথাটা শোন।" "কি হয়েছে?" "আমার না শরীরটা কেমন করছে। বাবা - মা এখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। যদি অ্যাডমিট করে, তাহলে তুমি কি করে আসবে?" আমরা একে ওপরকে কথা দিয়েছিলাম। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় দুজনে পাশাপাশি থাকবো। কথাটা শুনেই মাথাটা ভোভো করতে লাগলো। কোনোমতে বললাম, "দেখ ডাক্তার কি বলে। অন্তত কালকের দিনটাও যদি সময় পাওয়া যায়।" বিকেলবেলা চারটে নাগাদ এলো ফোন, "কাল ভর্তি হতে বলেছে। জল কমে আসছে, কাল অবজারভেশন এ রাখবে, উন্নতি না হলে রবিবার সিজার।...

ইডেন ডায়েরি

ইডেন গার্ডেনে বহু ম্যাচ দেখেছি। কিন্তু আগের দিন আন্দ্রে রাসেল যা মারলো, এমন বোধহয় কমই দেখেছি। সচিনের টেস্ট সেঞ্চুরি দেখেছি, ক্লুস্নারের এক ওভারে আজহারের পরপর চারটে (না পাঁচটা) চার মারতে দেখেছি , অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম ছজন ব্যাটসম্যানের হাফ সেঞ্চুরি দেখেছি (আজহার ১৫০+)। একমাত্র বীরেন্দ্র সেহ্বাগ এর ৮৭ বলে সেঞ্চুরি বোধহয় এর সাথে তুলনায় আসতে পারে। আর অবশ্যই আসতে পারে রাহুল দ্রাবিড় ও লক্ষণ এর ঐতিহাসিক ব্যাটিং।  মার্চ ২০০১। আমি তখন ডিপ্লোমা পাশ করে একপ্রকার বেকার। একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট (খেপ) খেলতে গিয়ে বাঁদিকের কাঁধ ও হাতের জয়েন্ট ডিসলোকেট হয়ে যায়। ফলত ডাক্তার হাত সেট করে ডাইনা প্লাস্ট দিয়ে আটকে দেয় ও আমি মোটামুটি বা হাত কাটা হিসেবে ঘুরে বেড়াই। চেনাশোনা থাকায় আমি আর আমার বন্ধু টুলু বরাবর ইডেনের টিকিট পেতাম। সেবারও পেয়েছিলাম, বেশ কয়েকটা। বাবার কাছ থেকে দৈনিক বরাদ্দ পঁচিশ টাকা। বাস ভাড়া আসাযাওয়া মিলিয়ে পাঁচ টাকা, বাকি কুড়ি টাকায় সারাদিনের খাওয়া দাওয়া ও বিড়ি সিগারেট। খাওয়া দাওয়া বলতে হাইকোর্টের সামনে পনেরো টাকায় ডাল ভাত আলু ভাতে ও ক্ষুদ্র এক পি...

রবিবারের বাজার

রবিবার সকালে আমি চলেছি বাজারে, মহারানী শুধায়, মাছ না মাংস, আনিবে কাহারে। আগে থেকে ঠিক করো কি রাঁধিবো আহারে, গুষ্টির ফরমাস কপালে জোটে রবিবার দুপুরে।। রাগ করো কেন তুমি ওগো মহারানী, আনবো খাসি, ইলিশ আর কাতলা চালানি। আলু কুমড়ো পুঁই শাকে ইলিশের মুড়োখান, চালের গুঁড়ো সহ ভেজো তেলের বড়া চারখান।। পর্যাপ্ত পরিমাণে আনবো আমি দই, দই ইলিশ ও রেজালা, মনে ফোটে খই। সপ্তাহের বাকি দিনের তরে থাকবে পোনা মাছ, মেছো-পেত্নী ও কাটা-খাউনী করে না যে বাছ।। গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে ঝিঙে আর লাউ, আনবো সবজি এসব, পটল তো ফাউ। আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও কাঁচালঙ্কা, আনবো মনে করে, খাবো না কো বকা।। আমার বাজারের কথা শুনে মহারানী বলে, করেছি পেটুক কে বিয়ে, এই আছে কপালে।। © সুব্রত চৌধুরী

চিমনি, চাক ও চা

"স্যার বাঁচান!!" একটা করুন আর্তি শুনে লেবু চা খেতে খেতে মুখ তুলে তাকালাম। টাটা স্টিলের সাকচি গেটের বাইরেই মেন রোডের কাছে চা খাচ্ছিলাম। একটা সিকিউরিটি গার্ড একটি লেবারকে পাকড়াও করে কয়েক ঘা দিয়ে গেটের দিকে নিয়ে যেতে উদ্যত। আমি এগোতে ও সিকিউরিটি আমার আই কার্ড দেখে একটু ঢিল দিতেই, সে ছোড়া দে ছুট। কি কেস? আমি কিছুটা জানতাম, তাই অনেক কষ্টে হাসি চেপে দাড়িয়ে আছি। সিকিউরিটি তখন বলেই চলেছে, "কিতনা হারামী লড়কা হ্যায়, দুবারা মিলা তো ভর্তা বানা দুঙ্গা।" ২০০৮ সাল। আমি তখন পাওয়ার প্ল্যান্টে কংক্রিটের চিমনি বানানো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স এর হয়ে টাটা স্টিলের ভিতরে ১৪৫ মিটার (প্রায় ৪৮০ ফুট) উচু চিমনি বানানোর তদারকিতে। মূল কাঠামো বা শেল তৈরি হয়ে গেছে। বাইরের প্ল্যাটফর্মের ঢালাই ও হয়ে গেছে। রেলিং লাগানো ও রঙের কাজ চলছে। হঠাৎ একটি প্ল্যাটফর্মের নিচে মৌমাছিরা চাক বাঁধলো। প্রায় ৭৫ মিটার হাইটে। কিছুতেই ওই পাশে কাজ করতে দিচ্ছে না। কেউ গেলেই হুল মারে। পেস্ট কন্ট্রোল থেকে টাটা স্টিলের ভিতরে মৌমাছির চাক ভাঙার লোকজন, কেউই ওই উচ্চতায় গিয়ে ঝুলে ঝুলে কাজ কর...

টিউশন, ইনফ‍্যাচুয়েশন ও বিজয়ার এসিমিলেশন। (শেষ পর্ব)

Image
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফিরেছিল দুজনে সেদিন। কত কথা, বৃষ্টির আওয়াজও দমাতে পারেনি দুজনের ভোকাল কর্ড ও কানকে। কোচিংয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়েও ভালোই চলছিল দুজনের প্রেমপর্ব। অটো থেকে দু স্টপ আগে নামাটা এখন রোজনামচা পারমিতার। আদৃজা ও পিয়ালী দু একবার জিজ্ঞেস করায় গানের ক্লাসের কথা বলেছে। সাইকেলে পিছু পিছু সুদীপ এলেই কিছুটা পথ একসাথে চলা। জমানো কথা বলার একমাত্র সময় দুজনের। দেখতে দেখতে আরেক ইঁদুর দৌড়ের সময় উপস্থিত। সবাই জয়েন্টের ফর্ম ফিলআপ করেছে। সুদীপের যদিও কেমিস্ট্রি নিয়ে গ্রাজুয়েশন করার দিকেই মন পড়ে। সবাই যদি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে, তো বাকি সাবজেক্ট গুলো কি হারিয়েই যাবে? বাড়ির সবার ও পারমিতার পীড়াপীড়িতে যদিও ভরতেই হয়েছে জয়েন্টের ফর্ম। পরীক্ষাতেও বসেছিল। উচ্চমাধ্যমিকে সুদীপ কেমিস্ট্রি ও অংকে লেটার সহ স্টার। দেবা এবং পিয়ালীও স্টার, পারমিতা, আদৃজা সহ বাকিরাও ফার্স্ট ডিভিশন, বিশ্বজিৎ একমাত্র সেকেন্ড ডিভিশন। তবে জয়েন্টে হয়নি সুদীপের। সিট মোটে ২০০০, তাই হয়নি বলে দুঃখ নেই সুদীপের, কিন্ত পারমিতার খুব মন খারাপ। সুদীপ পায়নি, ও নিজেও পায়নি ডাক্তারিতে। ডঃ রায় মেয়ের ডাক্তারি পড়ার ব্যবস্থা করেন...

টিউশন, ইনফ‍্যাচুয়েশন ও বিজয়ার এসিমিলেশন। (পার্ট ২)

Image
বুধবার কোচিংয়ে একটু দেরি করে ঢুকলো সুদীপ। ইচ্ছা করেই দেরি করেছিল, তার বিলম্বিত প্রবেশে কারোর মুখে ঈষৎ হাসি আসে কিনা দেখার জন্য। এবং তা দেখে সে মনে মনে যারপরনাই খুশি। পড়া শেষ হতেই বাইরে বেরিয়ে সবাই ঘিরে ধরলো সুদীপকে। "আগের দিন স্যার কি বললো?" "মোগলাইয়ের বাকি পঁচাশি টাকা দেবার জন্যই বসতে বলেছিলো" বলে সুদীপ পাশ কাটিয়ে যায়। সাইকেল নিয়ে সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে অটো স্ট্যান্ডের কাছে এসে সুদীপ সবাইকে জিজ্ঞেস করে "মোগলাই পরোটাটা কেমন ছিল, কেউ বললি না তো?" সবাই ভাল, খুব ভালো বললেও পারমিতার ঘাড় ঘুরিয়ে ঠোঁটের কোনের হাসিটাই সুদীপের শ্রেষ্ঠ পাওনা মনে হয়। ধীরে ধীরে পারমিতার সাথে সহজ হয় সুদীপের সম্পর্কটা। বন্ধুত্ব ও অব্যক্ত প্রেম মিলেমিশে একটা নিবিড় সম্পর্কে মুড়ে দেয় দুজনকেই। পড়াশোনার সাথে হাসি-ঠাট্টা থেকে আড্ডা সবই চলতে থাকে টিউশন ক্লাসে, অলক্ষে চলে চোখাচুখি। আদৃজা ব্যাপারটা জানে বলে মাঝে মধ্যে একটু ফোড়ন কাটে। অটোর পিছনে দুরন্ত গতিতে চলে স্ট্রিট ক্যাট সাইকেল। অটো থেকে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য হাঁটতে থাকা পারমিতাকে আরো একবার দেখে যায় সুদীপ। হঠাৎ এক ফুটবল টুর্নামেন্ট খ...