টিউশন, ইনফ্যাচুয়েশন ও বিজয়ার এসিমিলেশন। (পার্ট ২)
বুধবার কোচিংয়ে একটু দেরি করে ঢুকলো সুদীপ। ইচ্ছা করেই দেরি করেছিল, তার বিলম্বিত প্রবেশে কারোর মুখে ঈষৎ হাসি আসে কিনা দেখার জন্য। এবং তা দেখে সে মনে মনে যারপরনাই খুশি।
পড়া শেষ হতেই বাইরে বেরিয়ে সবাই ঘিরে ধরলো সুদীপকে। "আগের দিন স্যার কি বললো?" "মোগলাইয়ের বাকি পঁচাশি টাকা দেবার জন্যই বসতে বলেছিলো" বলে সুদীপ পাশ কাটিয়ে যায়। সাইকেল নিয়ে সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে অটো স্ট্যান্ডের কাছে এসে সুদীপ সবাইকে জিজ্ঞেস করে "মোগলাই পরোটাটা কেমন ছিল, কেউ বললি না তো?" সবাই ভাল, খুব ভালো বললেও পারমিতার ঘাড় ঘুরিয়ে ঠোঁটের কোনের হাসিটাই সুদীপের শ্রেষ্ঠ পাওনা মনে হয়।
ধীরে ধীরে পারমিতার সাথে সহজ হয় সুদীপের সম্পর্কটা। বন্ধুত্ব ও অব্যক্ত প্রেম মিলেমিশে একটা নিবিড় সম্পর্কে মুড়ে দেয় দুজনকেই। পড়াশোনার সাথে হাসি-ঠাট্টা থেকে আড্ডা সবই চলতে থাকে টিউশন ক্লাসে, অলক্ষে চলে চোখাচুখি। আদৃজা ব্যাপারটা জানে বলে মাঝে মধ্যে একটু ফোড়ন কাটে। অটোর পিছনে দুরন্ত গতিতে চলে স্ট্রিট ক্যাট সাইকেল। অটো থেকে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য হাঁটতে থাকা পারমিতাকে আরো একবার দেখে যায় সুদীপ।
হঠাৎ এক ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে পায়ের হাড়ে চোট পেল সুদীপ। অটো করে স্ট্যান্ড অবধি এসে কোচিংয়ের বাকি পথটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে, ফিরে তাকালো পিছন থেকে চেনা গলায় নিজের নাম শুনে। পারমিতা রাস্তাতেই জেরা শুরু করে, কিন্তু সুদীপের কানে কিছুই যায় না সেসব। নিজে থেকে সেদিন পারমিতা হাত ধরায় মনে মনে আশীর্বাদ করে বিপক্ষের প্লেয়ারটাকে। কোচিং শেষ হতে একপ্রকার জোর করেই নিজের বাড়ি নিয়ে গেল পারমিতা। ডঃ রায়, পারমিতার বাবা, নাম করা অর্থোপেডিক সার্জেন। বিশাল বাড়ি, বিত্তশালী পরিবার। দুই মেয়ে, পারমিতার দিদিও ডাক্তারির ছাত্রী। ফেরার পথে অটোয় বসে ভাবে, এত বড় ফ্যামিলি, সেই মেয়েকে মনের কথা বলবে কিভাবে। নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয় সুদীপ, আসলে কুঁকড়ে যায়।
পারমিতার জন্মদিনে সবার নেমন্তন্ন। সুদীপকেও বলেছে। বাড়িতে বন্ধুর জন্মদিন বলে বেরিয়েও শেষ অবধি পার্কে বসেই সন্ধ্যেটা কাটিয়ে দিল। নেক্সট ক্লাসের দিন দেরি করে পৌঁছালে পারমিতার জিজ্ঞাসু চোখ চেয়ে ওঠে, একটু যেন রেগে আছে। পড়া শেষ হতে সবাই বেরোচ্ছে, পারমিতা স্যারকে একটা পড়া জিজ্ঞেস করে বসে থাকে, কঠিন দৃষ্টিতে সুদীপের দিকে চেয়ে।
সুদীপ কোচিং থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে অটো স্ট্যান্ডের সামনে সিগারেট খাচ্ছিলো, দেখলো পারমিতা আসছে। "কিছু বলবি?" "হ্যা, তুই তো এলি না, তোর খাওয়াটা ডিউ আছে, চল।" ছোট্ট রেস্টুরেন্টে ছোট ছোট কেবিন। একটাতে বসলো দুজনে, মুখোমুখি, তবু মুখে কথা নেই কারোর।
পারমিতা অর্ডার করলো দুটো এগ চাওমিন ও একটা চিলি চিকেন। চাওমিন অর্ডার করা দেখে একটু ভুরু কুঁচকে তাকাতেই পারমিতা বললো "আদৃজা বলেছে তুই এগ চাউ ও চিলি চিকেন খুব ভালোবাসিস, তাই। কুচো পেঁয়াজ আর শশা ছড়িয়ে ও ঠেসে কুমড়োর সসগুলো দিয়ে খেতেই নাকি বেশি পছন্দ তোর?"
একদম যেমন পছন্দ, তেমন করেই দিয়েছে চাওমিনটা। ডিমের ভুজ্জির টুকরো, সস ও শশা-পেঁয়াজের আস্তরণ ভেদ করে ভালোই উকি মারছে।
"থ্যাংকস।"
"আর আমার গিফট?"
"এই রে, আমি তো কিছু নিয়ে আসি নি।"
"সব সময় জিনিস নিয়ে আসতে হবে? তুই কি মুখ ফুটে কিছুই বলবি না কোনোদিন?" চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলে পারমিতা।
কাটা-চামচ এ তোলা চাওমিনটা মুখে না ঢুকে জামায় গিয়ে পড়লো সুদীপের।
© সুব্রত চৌধুরী (শেষ পর্ব শীঘ্রই)
Disclaimer - The incidents and characters are a work of fiction and Resemblance to any person is purely coincidental.
পড়া শেষ হতেই বাইরে বেরিয়ে সবাই ঘিরে ধরলো সুদীপকে। "আগের দিন স্যার কি বললো?" "মোগলাইয়ের বাকি পঁচাশি টাকা দেবার জন্যই বসতে বলেছিলো" বলে সুদীপ পাশ কাটিয়ে যায়। সাইকেল নিয়ে সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে অটো স্ট্যান্ডের কাছে এসে সুদীপ সবাইকে জিজ্ঞেস করে "মোগলাই পরোটাটা কেমন ছিল, কেউ বললি না তো?" সবাই ভাল, খুব ভালো বললেও পারমিতার ঘাড় ঘুরিয়ে ঠোঁটের কোনের হাসিটাই সুদীপের শ্রেষ্ঠ পাওনা মনে হয়।
ধীরে ধীরে পারমিতার সাথে সহজ হয় সুদীপের সম্পর্কটা। বন্ধুত্ব ও অব্যক্ত প্রেম মিলেমিশে একটা নিবিড় সম্পর্কে মুড়ে দেয় দুজনকেই। পড়াশোনার সাথে হাসি-ঠাট্টা থেকে আড্ডা সবই চলতে থাকে টিউশন ক্লাসে, অলক্ষে চলে চোখাচুখি। আদৃজা ব্যাপারটা জানে বলে মাঝে মধ্যে একটু ফোড়ন কাটে। অটোর পিছনে দুরন্ত গতিতে চলে স্ট্রিট ক্যাট সাইকেল। অটো থেকে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য হাঁটতে থাকা পারমিতাকে আরো একবার দেখে যায় সুদীপ।
হঠাৎ এক ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে পায়ের হাড়ে চোট পেল সুদীপ। অটো করে স্ট্যান্ড অবধি এসে কোচিংয়ের বাকি পথটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে, ফিরে তাকালো পিছন থেকে চেনা গলায় নিজের নাম শুনে। পারমিতা রাস্তাতেই জেরা শুরু করে, কিন্তু সুদীপের কানে কিছুই যায় না সেসব। নিজে থেকে সেদিন পারমিতা হাত ধরায় মনে মনে আশীর্বাদ করে বিপক্ষের প্লেয়ারটাকে। কোচিং শেষ হতে একপ্রকার জোর করেই নিজের বাড়ি নিয়ে গেল পারমিতা। ডঃ রায়, পারমিতার বাবা, নাম করা অর্থোপেডিক সার্জেন। বিশাল বাড়ি, বিত্তশালী পরিবার। দুই মেয়ে, পারমিতার দিদিও ডাক্তারির ছাত্রী। ফেরার পথে অটোয় বসে ভাবে, এত বড় ফ্যামিলি, সেই মেয়েকে মনের কথা বলবে কিভাবে। নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয় সুদীপ, আসলে কুঁকড়ে যায়।
পারমিতার জন্মদিনে সবার নেমন্তন্ন। সুদীপকেও বলেছে। বাড়িতে বন্ধুর জন্মদিন বলে বেরিয়েও শেষ অবধি পার্কে বসেই সন্ধ্যেটা কাটিয়ে দিল। নেক্সট ক্লাসের দিন দেরি করে পৌঁছালে পারমিতার জিজ্ঞাসু চোখ চেয়ে ওঠে, একটু যেন রেগে আছে। পড়া শেষ হতে সবাই বেরোচ্ছে, পারমিতা স্যারকে একটা পড়া জিজ্ঞেস করে বসে থাকে, কঠিন দৃষ্টিতে সুদীপের দিকে চেয়ে।
সুদীপ কোচিং থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে অটো স্ট্যান্ডের সামনে সিগারেট খাচ্ছিলো, দেখলো পারমিতা আসছে। "কিছু বলবি?" "হ্যা, তুই তো এলি না, তোর খাওয়াটা ডিউ আছে, চল।" ছোট্ট রেস্টুরেন্টে ছোট ছোট কেবিন। একটাতে বসলো দুজনে, মুখোমুখি, তবু মুখে কথা নেই কারোর।
পারমিতা অর্ডার করলো দুটো এগ চাওমিন ও একটা চিলি চিকেন। চাওমিন অর্ডার করা দেখে একটু ভুরু কুঁচকে তাকাতেই পারমিতা বললো "আদৃজা বলেছে তুই এগ চাউ ও চিলি চিকেন খুব ভালোবাসিস, তাই। কুচো পেঁয়াজ আর শশা ছড়িয়ে ও ঠেসে কুমড়োর সসগুলো দিয়ে খেতেই নাকি বেশি পছন্দ তোর?"
একদম যেমন পছন্দ, তেমন করেই দিয়েছে চাওমিনটা। ডিমের ভুজ্জির টুকরো, সস ও শশা-পেঁয়াজের আস্তরণ ভেদ করে ভালোই উকি মারছে।
"থ্যাংকস।"
"আর আমার গিফট?"
"এই রে, আমি তো কিছু নিয়ে আসি নি।"
"সব সময় জিনিস নিয়ে আসতে হবে? তুই কি মুখ ফুটে কিছুই বলবি না কোনোদিন?" চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলে পারমিতা।
কাটা-চামচ এ তোলা চাওমিনটা মুখে না ঢুকে জামায় গিয়ে পড়লো সুদীপের।
© সুব্রত চৌধুরী (শেষ পর্ব শীঘ্রই)
Disclaimer - The incidents and characters are a work of fiction and Resemblance to any person is purely coincidental.
Comments
Post a Comment