চিলি চিকেন আর চাউমিন
পই পই করে বলে গেছিল, দুদিন সকালে দই চিরে খেয়ে নিতে এবং ভাত আর চিকেনের প্লেন ঝোল বাদে কোনো কিছু রান্না করার দরকার নেই। পাঁচ বেলার ব্যাপার, লালমোহন বাবুর সেই "রিভলভার মানে ছটা গুলি, ঠ্যা-ঠ্যা-ঠ্যা-ঠ্যা---ঠ্যায়" এর মত ফ্রিজে লোড করে দিয়ে গেছিল মহারানী, ডাল, বাঁধাকপি, পটল, পনির, আলুরদম মায় কাঁচা আমের চাটনি অবধি।
আমি নাকি একা থাকলেই ঘর হেব্বি অগোছালো করে রাখি, আমার রান্নার পর অফিস বেরিয়ে গেলে কাজের মেয়েটা এসে রুদালি হয়ে যায়, ময়লা নিতে এসে ক্লিনাররা নাকি ডাস্টবিন তুলতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধুই নেগেটিভ বুঝলেন, পজিটিভ দিক গুলো কেউ বুঝতেই চাইবে না। এই যে অন্য সময় কাক পক্ষী গুলো আসতে ও বসতে না পারলেও এখন যে বারান্দার ছায়ায় দু দণ্ড জিরোতে পারে, এই যে বার বার ক্যাবিনেট খুলে বালিশ কোলবালিশ চাদর ঢোকানো বের করার পাঠ রাখিনা বলে আরশোলার বাচ্চাগুলো সেখানে ঢুকে বাসা বাঁধতে পারে না, গরমকালে ঘরের মধ্যে ভেজা তোয়ালে ও জামাকাপড় থাকলে এই শুষ্ক দেশে ঘরটার হিউমিডিটি মেন্টেন করতে সাহায্য করে, এগুলো কেউ দেখবে না।
তা যা হোক, যা বলছিলাম, রান্নার কথা। চিকেন টা বার করে দেখলাম যতগুলো পিস আছে, একসাথে ঝোল করে রেঁধে খেলে পচ্চুর ক্যালোরি ঢুকে যাবে শরীরে। ভুড়িটা দু ইঞ্চি বেড়ে গেলে কারোর আবার সবার সামনে ভুড়িদাস কে নিয়ে যেতে পেস্টিজে গ্যামাক্সিন লেগে যেতে পারে। এদিকে মিষ্টি দই তো এক সকালেই সাবাড়, পরের দিনের বেরেকফাষ্টো কি হবে?
অনেক ভেবে একটা উপায় বার করলাম জানেন। ভারত আর চীনের মধ্যে তো সম্পর্ক এখন আদায় কাঁচকলায়, তাই সেদিনের রাতের মত পাতি ভারতীয় মুরগির ঝোল বানালাম। ভাত দিয়ে খারাপ লাগেনি, কিন্তু এবার উল্টো কেস। আগে থেকে ভারতীয় ক্যালোরি ঢুকে রেডি হয়ে বসে আছে নিজের চিরপরিচিত ডোকলাম এ, সেখানে যদি কয়েকটা চিনা ক্যালোরিকে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে। এখানে তো আর ইউএন বা ইউএসএ আসবে না সমঝোতা করাতে, আবকি বার, আর ইয়া পার, শত্রুপক্ষকে ঢুকতে দেখলেই কচুকাটা করবে। হুহু বাওয়া, ক্যালোরি ক্যালোরি কো কাটতা হ্যায়, অর্ধেক ক্যালোরি তো কম হবে। তাই সকালে উঠেই চৈনিক চিকেন, মানে চিলি চিকেন বানানোর তোড়জোড় শুরু করে দিলাম। সাথে চাউমিন।
সময় এদিকে খুব কম, আগেভাগে অফিস যেতে হবে। ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগের দিন, বসেদের হঠাৎই মনে হয়, আপনিই দুনিয়ার সবচাইতে কর্মঠ ব্যাক্তি এবং আপনার ছুটিতে চলে যাওয়া মানে অফিসের কাজের গতি নাকি ফনীর উড়িষ্যা থেকে বাংলায় আসার মত হয়ে যাবে (কথাটার দুরকম মানে বেরোয়, বসেরা ছুটি দেওয়ার আগে সামনে এক মানে বলে, আর ছুটিতে চলে গেলেই, আপদ গেছে শান্তি)। বছরের বাকি সময় তাদের অ্যান্টেনা তে যদিও প্রথম মানেটা ক্যাচ কট কট হওয়া আর আগেকার ছাদের কোনায় টেলিভিশনের অ্যান্টেনার উপরে গরু ছাগলের বসে বসে হাওয়া খাওয়া একই ব্যাপার, বিশেষত অ্যাপ্রাইজালের সময়।
সময় বাঁচাতে, নিলাম দুটো কড়াই আর একটা সসপ্যান। হাত দুটো হলে কি হবে, না মানে, বার্নার তো তিনটে। সসপ্যানে জল চাপিয়ে ফুটতে দিয়েই অন্য দুটো কড়াইয়ে তেল ঢালতে গিয়ে দেখি শুধু সর্ষের তেল আছে। কি করি? তেল ইজ তেল, চীনারা সর্ষের তেল খাক না খাক, আমি তো খাই। মা দুগ্গা বলে দিলাম দু পলা করে দুটো কড়াইয়ে ঢেলে। পেয়াজ কাঁচা লঙ্কা কুচিয়ে ফ্রিজের থেকে যা যা সস ছিল, মানে টম্যাটো, চিলি আর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় "শোওয়া" সসের বোতল বার করে ফেললাম। সব মিলিয়ে ভেজে ভ আর ঘেঁটে ঘ করে দিব্যি বানিয়ে ফেললাম জানেন, "বেরেস্তা দেওয়া" চিলি চিকেন আর "সর্ষের তেলের ঝাঁঝালো" চাউমিন। শুধু চিকেন গুলো ভাজার সময় নিজেদের ঝাঁঝের চোটে তেল গুলো নিজেরাই দেখলাম রান্নাঘরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল বিন্দু বিন্দু হয়ে। সিঙ্কের ভেতরে অবশ্য তারা গুটিকয়েক বাসনের তলায় লুকিয়ে পড়েছিলেন শেষ অবধি, দৃষ্টিগোচর হল না।
তাও, আমি অবশ্য অফিস যাওয়ার আগে বড় ন্যাতাটা বার করে রেখে গেছিলাম, কি জানি সত্যি সত্যিই কাজের মেয়েটা এসে রুদালী হয়ে গেলে, ঘরটা ভেসে যাবে আর সেটা তো মুছতেও হবে।
© সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment