গনাদার সরকারি চাকরি
#গনাদার_সরকারি_চাকরি
পেটুক গনাদা একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে। এক বছরের প্রবেশন পিরিওড কাটিয়ে দিতে পারলেই পার্মানেন্ট। খুশি আর ধরে না। এতদিন পাড়ার সেন্টুদা কে সরকারি চাকরি করতে দেখে খুব হিংসে হত, শালা আসে যায় আর মাইনে পায়।
চাকরিতে যোগ দিতেই ভোট কর্মীদের জন্যে ভোটের আগেরদিন ও ভোটের দিন রান্নার যে অর্ডার দেওয়া হয়েছে, সেই ওয়ার্ক অর্ডার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। বড় সাহেব বলে দিলেন, "পেটুকপুর বিধানসভার ভোটের সেন্ট্রাল ক্যাম্প, বয়েজ স্কুলে হয়েছে, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী রান্না করানো থেকে ভেন্ডারের বিল চেক করে ফরওয়ার্ড করার দায়িত্ব আপনার।"
গনাদা মহা খুশি এমন দায়িত্ব পেয়ে, উফফ সেন্টুদা এতদিন কি মজাটাই না করেছে। ২০০০ লোকের জন্যে পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে ভোগের রান্না বা বিজয়া সম্মিলনীর রান্না করানোতে গনাদা এক্সপার্ট লোক। এখানে হাজার আটেক লোক, এ আর এমন কি ব্যাপার? এইটাই আগের প্রাইভেট চাকরিতে হলে কাউকে অর্ডার না দিয়ে কর্মচারীদের দিয়েই বাজার করাতো, পারলে রান্নাটা ও।
রান্না বেশ ভালোই হয়েছিল। শুধু ভোটের আগেরদিন রাত্রে মটনের ঝোলের জায়গায় কষা করেছিল, কিন্তু এত জম্পেশ নামিয়েছিল যে গনাদা আর না করেনি। গোটা দশেক ভোট কর্মীর ভোটের দিন পেট ছেড়েছিল একটু শুধু। আর ভোটের দিন দুপুরে সব আইটেম নামাতে নামাতে ঘন্টা খানেক দেরি হয়, এই যা। সে একটু আধটু হয়েই থাকে বড়সর আয়োজনে।
ভেন্ডার বিল জমা দিতেই একবার চোখ বুলিয়েই বড় সাহেবকে ফরোয়ার্ড করে দিল গনাদা। কিছুক্ষণ পর ডাক পড়ল।
"বিলের সাথে টেস্ট রিপোর্ট কই?"
"টেস্ট তো ভালোই ছিল স্যার, আমি প্রত্যেকটা খাবার টেস্ট করে তবেই ছেড়েছি। আপনিও তো খেয়েছিলেন স্যার।"
"আমি test এর কথা বলেছি taste এর কথা না"
"মানে?"
"ওয়ার্ক অর্ডার টা কি খুলেও দেখেছেন, না শুধু মেনু দেখেই ছেড়ে দিয়েছেন?"
"না, মানে........"
"সরকারি অফিস মানেই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাই না? আপনার কি কি করা উচিত ছিল জানেন?"
"ইয়ে মানে........"
"প্রথমত সমস্ত আইটেম এর হিসেব (reconciliation) করে দেখুন। যেমন, প্রত্যেক জন পিছু ৭৫ গ্রাম চালের ভাত দেওয়ার কথা ছিল। বিল বলছে দু দিনে টোটাল ৩২০০০ প্লেট সাপ্লাই করেছে। সাথে ৪% ওয়েস্টেজ থাকতে বাধ্য। তাহলে ২৫ কুইন্টালের জায়গায় ২৩ কুইন্টাল চাল দিয়ে সে কি করে কাজ চালালো? এছাড়া সেই চাল আদৌ খাদ্যযোগ্য ছিল কিনা, সেটা টেস্ট করার কথা। তার ল্যাব রিপোর্ট কই? যে জলে রান্না করেছে, সেটা বিশুদ্ধ ছিল কিনা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করেছেন? রান্নায় যে সমস্ত মশলা ব্যবহার করেছে, সে গুলো যে অ্যাপ্রুভড মেক বা কোম্পানির ছিল, তার ইন্সপেকশন রিপোর্ট কই? মাংসটা খাসি ছিল না ছাগল সেটা কোন ল্যাবে টেস্ট করানো হয়েছে? ওয়ার্ক অর্ডারে মাংসের ঝোল লেখা থাকলেও, কষা বানাতে কে বলেছিল?"
"না, মানে ওটা আমিই বলেছিলাম। খেতে হেব্বি হয়েছিল, পুরো গোলবাড়ি স্টাইল।"
"ওয়ার্ক অর্ডার থেকে ডিভিয়েসানের এপ্রুভাল নিয়েছিলেন?"
"না। কিন্তু সবাই তো বেশ চেটেপুটেই খেয়েছে স্যার।"
"দশ জনের পেট খারাপ হয়েছিল, সে খবর আছে? আর গোলবাড়ির স্টাইলে যখন করেছে, তার মানে নির্ঘাত পেঁপে মিশিয়েছে। মানে তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করে জ্বালানি বাঁচিয়েছে, তাই তো? কত টাকার জ্বালানি বাঁচিয়েছে, সেটা হিসেব করুন, বিল থেকে কাটতে হবে। সাথে মশলাপাতি যদি কিছু বাঁচিয়ে থাকে, তো সেটাও।"
"মানে?"
"যা শুনলেন, সেটাই মানে। ডালের ইন্সপেকশন রিপোর্ট নেই। সর্ষের তেলে ভেজাল ছিল কিনা চেক করিয়েছেন? নুন আয়োডাইজড ছিল কিনা তার ল্যাব রিপোর্টও তো নেই।"
"নুন তেল, এগুলোও চেক করতে হবে?"
"তবে কি শুধু মুখ দেখতে এসেছেন?"
"না, মানে, এইসব টেস্ট করতে হয়, কোনোদিন জানতামই না।"
"হ্যাঁ, সরকারি চাকরি মানে তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাই না?"
"না, মানে......"
"থাক থাক, অনেক বুঝেছি। তা, ভোটের দিন যে একঘন্টা লেট করে রান্না নামালো, তার জন্যে লেট ফি কেটেছেন?"
"না।"
"কেন?"
"সব তো ঠিকঠাক মিটে গেছে, তাই।"
"আপনার ডেলিগেশন অফ পাওয়ার এ লেট ফি মাফ করার কথা বলা আছে? ওটা চিফ সাহেবের পাওয়ার। জান, সঠিক ক্লজ দেখে এপ্রুভাল নোট বানান। আর সাথে যে টেস্ট রিপোর্ট, ইন্সপেকশন রিপোর্ট এর কথা বললাম সেগুলো জমা দিন।"
"স্যাম্পেল তো কিছু নেই স্যার, সব খাবার খাওয়া হয়ে গেছে।"
"ইরেস্পন্সিবল লোক কোথাকার। প্রথম বার বলে, আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না, বা আপনার স্যালারি থেকে টাকা কাটা হচ্ছে না। তবে পরের দফার ইলেকশনে আপনি বোমভূম জেলার গুড়বাতাসা কেন্দ্রে পোলিং স্টাফ হিসেবে কাজ করবেন। এখন আসতে পারেন।"
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, ভোটের ডিউটির কথা শুনেই গনাদা দু কিলো রাবড়ি আর তিন কিলো মিষ্টি দই নিয়ে নিজের পুরোনো বসের বাড়িতে দেখা করতে গেছেন। আর প্রতিজ্ঞা করেছেন, জীবনে গোলবাড়ির স্টাইলে মাংস রান্না করে খাবেন না।
ডিসক্লেইমার - ঘটনাবলী, স্থানকাল ও চরিত্রগুলি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোনরকম মিল পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়।
সুব্রত চৌধুরী
পেটুক গনাদা একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে। এক বছরের প্রবেশন পিরিওড কাটিয়ে দিতে পারলেই পার্মানেন্ট। খুশি আর ধরে না। এতদিন পাড়ার সেন্টুদা কে সরকারি চাকরি করতে দেখে খুব হিংসে হত, শালা আসে যায় আর মাইনে পায়।
চাকরিতে যোগ দিতেই ভোট কর্মীদের জন্যে ভোটের আগেরদিন ও ভোটের দিন রান্নার যে অর্ডার দেওয়া হয়েছে, সেই ওয়ার্ক অর্ডার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। বড় সাহেব বলে দিলেন, "পেটুকপুর বিধানসভার ভোটের সেন্ট্রাল ক্যাম্প, বয়েজ স্কুলে হয়েছে, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী রান্না করানো থেকে ভেন্ডারের বিল চেক করে ফরওয়ার্ড করার দায়িত্ব আপনার।"
গনাদা মহা খুশি এমন দায়িত্ব পেয়ে, উফফ সেন্টুদা এতদিন কি মজাটাই না করেছে। ২০০০ লোকের জন্যে পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে ভোগের রান্না বা বিজয়া সম্মিলনীর রান্না করানোতে গনাদা এক্সপার্ট লোক। এখানে হাজার আটেক লোক, এ আর এমন কি ব্যাপার? এইটাই আগের প্রাইভেট চাকরিতে হলে কাউকে অর্ডার না দিয়ে কর্মচারীদের দিয়েই বাজার করাতো, পারলে রান্নাটা ও।
রান্না বেশ ভালোই হয়েছিল। শুধু ভোটের আগেরদিন রাত্রে মটনের ঝোলের জায়গায় কষা করেছিল, কিন্তু এত জম্পেশ নামিয়েছিল যে গনাদা আর না করেনি। গোটা দশেক ভোট কর্মীর ভোটের দিন পেট ছেড়েছিল একটু শুধু। আর ভোটের দিন দুপুরে সব আইটেম নামাতে নামাতে ঘন্টা খানেক দেরি হয়, এই যা। সে একটু আধটু হয়েই থাকে বড়সর আয়োজনে।
ভেন্ডার বিল জমা দিতেই একবার চোখ বুলিয়েই বড় সাহেবকে ফরোয়ার্ড করে দিল গনাদা। কিছুক্ষণ পর ডাক পড়ল।
"বিলের সাথে টেস্ট রিপোর্ট কই?"
"টেস্ট তো ভালোই ছিল স্যার, আমি প্রত্যেকটা খাবার টেস্ট করে তবেই ছেড়েছি। আপনিও তো খেয়েছিলেন স্যার।"
"আমি test এর কথা বলেছি taste এর কথা না"
"মানে?"
"ওয়ার্ক অর্ডার টা কি খুলেও দেখেছেন, না শুধু মেনু দেখেই ছেড়ে দিয়েছেন?"
"না, মানে........"
"সরকারি অফিস মানেই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাই না? আপনার কি কি করা উচিত ছিল জানেন?"
"ইয়ে মানে........"
"প্রথমত সমস্ত আইটেম এর হিসেব (reconciliation) করে দেখুন। যেমন, প্রত্যেক জন পিছু ৭৫ গ্রাম চালের ভাত দেওয়ার কথা ছিল। বিল বলছে দু দিনে টোটাল ৩২০০০ প্লেট সাপ্লাই করেছে। সাথে ৪% ওয়েস্টেজ থাকতে বাধ্য। তাহলে ২৫ কুইন্টালের জায়গায় ২৩ কুইন্টাল চাল দিয়ে সে কি করে কাজ চালালো? এছাড়া সেই চাল আদৌ খাদ্যযোগ্য ছিল কিনা, সেটা টেস্ট করার কথা। তার ল্যাব রিপোর্ট কই? যে জলে রান্না করেছে, সেটা বিশুদ্ধ ছিল কিনা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করেছেন? রান্নায় যে সমস্ত মশলা ব্যবহার করেছে, সে গুলো যে অ্যাপ্রুভড মেক বা কোম্পানির ছিল, তার ইন্সপেকশন রিপোর্ট কই? মাংসটা খাসি ছিল না ছাগল সেটা কোন ল্যাবে টেস্ট করানো হয়েছে? ওয়ার্ক অর্ডারে মাংসের ঝোল লেখা থাকলেও, কষা বানাতে কে বলেছিল?"
"না, মানে ওটা আমিই বলেছিলাম। খেতে হেব্বি হয়েছিল, পুরো গোলবাড়ি স্টাইল।"
"ওয়ার্ক অর্ডার থেকে ডিভিয়েসানের এপ্রুভাল নিয়েছিলেন?"
"না। কিন্তু সবাই তো বেশ চেটেপুটেই খেয়েছে স্যার।"
"দশ জনের পেট খারাপ হয়েছিল, সে খবর আছে? আর গোলবাড়ির স্টাইলে যখন করেছে, তার মানে নির্ঘাত পেঁপে মিশিয়েছে। মানে তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করে জ্বালানি বাঁচিয়েছে, তাই তো? কত টাকার জ্বালানি বাঁচিয়েছে, সেটা হিসেব করুন, বিল থেকে কাটতে হবে। সাথে মশলাপাতি যদি কিছু বাঁচিয়ে থাকে, তো সেটাও।"
"মানে?"
"যা শুনলেন, সেটাই মানে। ডালের ইন্সপেকশন রিপোর্ট নেই। সর্ষের তেলে ভেজাল ছিল কিনা চেক করিয়েছেন? নুন আয়োডাইজড ছিল কিনা তার ল্যাব রিপোর্টও তো নেই।"
"নুন তেল, এগুলোও চেক করতে হবে?"
"তবে কি শুধু মুখ দেখতে এসেছেন?"
"না, মানে, এইসব টেস্ট করতে হয়, কোনোদিন জানতামই না।"
"হ্যাঁ, সরকারি চাকরি মানে তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাই না?"
"না, মানে......"
"থাক থাক, অনেক বুঝেছি। তা, ভোটের দিন যে একঘন্টা লেট করে রান্না নামালো, তার জন্যে লেট ফি কেটেছেন?"
"না।"
"কেন?"
"সব তো ঠিকঠাক মিটে গেছে, তাই।"
"আপনার ডেলিগেশন অফ পাওয়ার এ লেট ফি মাফ করার কথা বলা আছে? ওটা চিফ সাহেবের পাওয়ার। জান, সঠিক ক্লজ দেখে এপ্রুভাল নোট বানান। আর সাথে যে টেস্ট রিপোর্ট, ইন্সপেকশন রিপোর্ট এর কথা বললাম সেগুলো জমা দিন।"
"স্যাম্পেল তো কিছু নেই স্যার, সব খাবার খাওয়া হয়ে গেছে।"
"ইরেস্পন্সিবল লোক কোথাকার। প্রথম বার বলে, আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না, বা আপনার স্যালারি থেকে টাকা কাটা হচ্ছে না। তবে পরের দফার ইলেকশনে আপনি বোমভূম জেলার গুড়বাতাসা কেন্দ্রে পোলিং স্টাফ হিসেবে কাজ করবেন। এখন আসতে পারেন।"
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, ভোটের ডিউটির কথা শুনেই গনাদা দু কিলো রাবড়ি আর তিন কিলো মিষ্টি দই নিয়ে নিজের পুরোনো বসের বাড়িতে দেখা করতে গেছেন। আর প্রতিজ্ঞা করেছেন, জীবনে গোলবাড়ির স্টাইলে মাংস রান্না করে খাবেন না।
ডিসক্লেইমার - ঘটনাবলী, স্থানকাল ও চরিত্রগুলি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোনরকম মিল পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়।
সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment