আমাদের হ্যালোইন
#হ্যালোইন
আজ নাকি হ্যালোইন। আমি আজও এর ফান্ডাটা বুঝে উঠতে পারিনি। ভুতুড়ে কিছু, এইটা বুঝেছি। ভুতের মত সেজে গুজে ঘুরতে হবে, পার্টি করতে হবে, এইটুকু বুঝলেও, কুমড়ো টা কোন কাজে লাগে, আজ অবধি বুঝতে পারলাম না।
আজ অবধি বেশ কিছু হ্যালোইন সাজ দেখেছি, অন্যতম মহারানীকেই। সদ্য বিয়ে করে জামশেদপুরে সংসার পেতেছি তখন। এক রবিবার, সন্ধ্যেবেলা পার্টি আছে, এদিকে ডিউটি পড়ল বিকেল অবধি। উনি রেগে টং, কারণ পার্টি উপলক্ষে ওনাকে পার্লার নিয়ে যাবো কথা দিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে, "তাড়াতাড়ি ফিরে নিয়ে যাবো", এই সব ভূজুং ভাজাং দিয়ে ও খাসির মাংস এনে দিয়ে অফিস কেটে পড়লাম। বলে গেলাম, ক্যান্টিনে খেয়ে একেবারে ফিরবো, নিজে যেন খেয়ে নেয়।
কিন্তু ভাগ্য সহায়, কাজটা তাড়াতাড়ি মিটে গেল, আড়াইটার মধ্যে। ফোন করলাম, দেখি রেগে সুইচড অফ করে রেখেছে। ভাবলাম, বাড়ি ফিরে সারপ্রাইজ দেব, একসাথে মটন কষা দিয়ে লাঞ্চ করবো। চুপি চুপি ফিরে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখি ভর দুপুরে পর্দা টর্দা টেনে লিভিং রুম অন্ধকার। টিভিতে ববি দেওল কাজলের "গুপ্ত" চলছে। আমিও চুপচাপ সোফায় বসে পড়লাম। হঠাৎ বাথরুমের দরজা খুলে এক হ্যালোউইন বেরিয়ে আসতেই তাকে দেখে আমি চমকে গেলাম এবং ফেসিয়াল প্যাক মুখে মাখা আমার হ্যালোইন মহারানী আমাকে অন্ধকারে চিনতে না পেরে তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।
তবে জীবনের বেস্ট হ্যালোইন সাজ বোধহয় আমরা বন্ধুরাই সাজিয়েছিলাম, এক বন্ধুকে। ডিপ্লোমার ফাইনাল ইয়ার। দেওঘর এসেছি পনেরো দিনের সার্ভে ক্যাম্প করতে। সাথে তিনজন প্রফেসর। তাদের মধ্যে কেউই ডক্টরেট না করলেও একজন একটু "PHD" ছিলেন। ৬ টা টিমে ভাগ হলেও, যে দুটো টিমে দুটি মেয়ে ছিল, তাদের প্রতি ওনার কর্তব্যপরায়ণতা যেন একটু বেশিই। বেশ কিছুদিন চলার পর কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম একটা কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে।
কুকের থেকে জানা গেল, উনি রাত্রে একটা করে বিয়ার খান, ও তারপর কুক কে দিয়ে ঘরেই খাবার আনিয়ে, খেয়ে শুয়ে পড়েন। এবং ভুতের ভয় সাংঘাতিক। ব্যাস প্ল্যান রেডি। ওখানে খুব লোডশেডিং হলেও পরদিন রাত্রে বারোটা নাগাদ ফিউজ খুলে বাড়ি অন্ধকার। কিছুক্ষণ বাদে নিজের নামে খোনা গলায় ডাক শুনে, ঘুম চোখে জানলায় তাকালেন।
ভুতের সাজ টা খুব সিম্পল ছিল। বৈদ্যনাথ ধামে পুজো দেবো বলে সাথে একটা ধুতি নিয়ে গেছিলাম। সেই ধুতি টাই এক বন্ধুর গায়ে ব্যান্ডেজ ভুতের মত জড়িয়ে, শুধু মুখের সামনে এক হাত লম্বা ঘোমটার মত ঝোলানো ছিল। এবং ঘুটঘুটে অন্ধকারে একটা টর্চ নিয়ে সেই ঘোমটার তলা দিয়ে যদি স্রেফ মুখের উপর আলো ফেলে দাড়ায় কেউ, একটা মনুষ্য মুখাবয়ব দেখতে পেলেও চোখ নাক মুখ কিছু থাকবে না। এবার ভাবুন হালকা নেশাগ্রস্ত বয়স্ক লোক ঘুম চোখে এই মূর্তি দেখলে কি হতে পারে। আজ্ঞে হ্যাঁ, মুহূর্তের জন্যে সেই দিকে তাকিয়েই দু বার হেঁচকি তুলে অজ্ঞান।
শেষ অবধি আমাদেরই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকে চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরাতে হয়। অবশ্য সেইবারের মত "PHD" এর দোষ কেটে গেছিলো।
সুব্রত চৌধুরী
আজ নাকি হ্যালোইন। আমি আজও এর ফান্ডাটা বুঝে উঠতে পারিনি। ভুতুড়ে কিছু, এইটা বুঝেছি। ভুতের মত সেজে গুজে ঘুরতে হবে, পার্টি করতে হবে, এইটুকু বুঝলেও, কুমড়ো টা কোন কাজে লাগে, আজ অবধি বুঝতে পারলাম না।
আজ অবধি বেশ কিছু হ্যালোইন সাজ দেখেছি, অন্যতম মহারানীকেই। সদ্য বিয়ে করে জামশেদপুরে সংসার পেতেছি তখন। এক রবিবার, সন্ধ্যেবেলা পার্টি আছে, এদিকে ডিউটি পড়ল বিকেল অবধি। উনি রেগে টং, কারণ পার্টি উপলক্ষে ওনাকে পার্লার নিয়ে যাবো কথা দিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে, "তাড়াতাড়ি ফিরে নিয়ে যাবো", এই সব ভূজুং ভাজাং দিয়ে ও খাসির মাংস এনে দিয়ে অফিস কেটে পড়লাম। বলে গেলাম, ক্যান্টিনে খেয়ে একেবারে ফিরবো, নিজে যেন খেয়ে নেয়।
কিন্তু ভাগ্য সহায়, কাজটা তাড়াতাড়ি মিটে গেল, আড়াইটার মধ্যে। ফোন করলাম, দেখি রেগে সুইচড অফ করে রেখেছে। ভাবলাম, বাড়ি ফিরে সারপ্রাইজ দেব, একসাথে মটন কষা দিয়ে লাঞ্চ করবো। চুপি চুপি ফিরে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখি ভর দুপুরে পর্দা টর্দা টেনে লিভিং রুম অন্ধকার। টিভিতে ববি দেওল কাজলের "গুপ্ত" চলছে। আমিও চুপচাপ সোফায় বসে পড়লাম। হঠাৎ বাথরুমের দরজা খুলে এক হ্যালোউইন বেরিয়ে আসতেই তাকে দেখে আমি চমকে গেলাম এবং ফেসিয়াল প্যাক মুখে মাখা আমার হ্যালোইন মহারানী আমাকে অন্ধকারে চিনতে না পেরে তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।
তবে জীবনের বেস্ট হ্যালোইন সাজ বোধহয় আমরা বন্ধুরাই সাজিয়েছিলাম, এক বন্ধুকে। ডিপ্লোমার ফাইনাল ইয়ার। দেওঘর এসেছি পনেরো দিনের সার্ভে ক্যাম্প করতে। সাথে তিনজন প্রফেসর। তাদের মধ্যে কেউই ডক্টরেট না করলেও একজন একটু "PHD" ছিলেন। ৬ টা টিমে ভাগ হলেও, যে দুটো টিমে দুটি মেয়ে ছিল, তাদের প্রতি ওনার কর্তব্যপরায়ণতা যেন একটু বেশিই। বেশ কিছুদিন চলার পর কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম একটা কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে।
কুকের থেকে জানা গেল, উনি রাত্রে একটা করে বিয়ার খান, ও তারপর কুক কে দিয়ে ঘরেই খাবার আনিয়ে, খেয়ে শুয়ে পড়েন। এবং ভুতের ভয় সাংঘাতিক। ব্যাস প্ল্যান রেডি। ওখানে খুব লোডশেডিং হলেও পরদিন রাত্রে বারোটা নাগাদ ফিউজ খুলে বাড়ি অন্ধকার। কিছুক্ষণ বাদে নিজের নামে খোনা গলায় ডাক শুনে, ঘুম চোখে জানলায় তাকালেন।
ভুতের সাজ টা খুব সিম্পল ছিল। বৈদ্যনাথ ধামে পুজো দেবো বলে সাথে একটা ধুতি নিয়ে গেছিলাম। সেই ধুতি টাই এক বন্ধুর গায়ে ব্যান্ডেজ ভুতের মত জড়িয়ে, শুধু মুখের সামনে এক হাত লম্বা ঘোমটার মত ঝোলানো ছিল। এবং ঘুটঘুটে অন্ধকারে একটা টর্চ নিয়ে সেই ঘোমটার তলা দিয়ে যদি স্রেফ মুখের উপর আলো ফেলে দাড়ায় কেউ, একটা মনুষ্য মুখাবয়ব দেখতে পেলেও চোখ নাক মুখ কিছু থাকবে না। এবার ভাবুন হালকা নেশাগ্রস্ত বয়স্ক লোক ঘুম চোখে এই মূর্তি দেখলে কি হতে পারে। আজ্ঞে হ্যাঁ, মুহূর্তের জন্যে সেই দিকে তাকিয়েই দু বার হেঁচকি তুলে অজ্ঞান।
শেষ অবধি আমাদেরই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকে চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরাতে হয়। অবশ্য সেইবারের মত "PHD" এর দোষ কেটে গেছিলো।
সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment