গেনুর ব্লগ থেকে

"একটা কনফার্মড টিকিট ও কাটতে পারে না মিনসে টা। উফফ কি যে করি!!"

সকাল সকাল মায়ের গজগজানি তে ঘুম ভেঙে গেল। মায়ের রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই কবে, মহালয়ারও আগে রওনা দিতে হয়েছিল এবার। একবার বাবাকে দিয়ে ফোন করিয়েছিল "পরমান্নে", যদি রওনা টা একটু পিছানো যায়। ফোনটা স্পিকারেই ছিল, ওপাশ থেকে উত্তর এলো "নিজের ভালো পাগলেও বোঝে "ভোলু", কিন্তু তোকে নিয়ে আর পারি না। বলি এত এত নতুন মদের দোকান খুলে দিলাম, ড্রাই ডে তুলে দিলাম, তা বউ যদি বেশিদিন বাপের বাড়িতে থাকে কার লাভ শুনি?"

ব্যাস, বাবাকে আর পায় কে। পাঁচটা ৭২ ইঞ্চির আমেরিকান টুরিস্টার কিনে এনে মালপত্তর প্যাক করতে শুরু করে দিলো। মা নিজে আরেকবার ফোন করেছিল বটে, বোঝাতে চেষ্টা করেছিল। "মহালয়ার আগে তো প্রেত পক্ষ, তখন তো "তিন্নাথ" মিলেও আমায় বানায়নি। অন্তত প্রতিপদ..........."
উল্টো দিক থেকে "মেরা বচন হি মেরা শাসন হ্যায়" শুনে আর কথা বাড়ায় নি মা।

আসার সময় তবু একটা ভালো ছিল। আগে আগে এসে যাওয়ায় পুজোর কিছু শপিং ও করে নিতে পেরেছিল মা। দিদিরা ও কেতো টাও সেরে নিয়েছে মায়ের সাথে। আমি তো দিন পনেরো আগেই কেনাকাটা সেরেই ফিরেছিলাম। কিন্তু এবার ফেরার ডেট যে কবে, তাই বোঝা দায়। এখন তো আবার মাতা শিবগামির নির্দেশে ফুল ফ্যামিলির ফ্যাশন শো। কার্নিভাল না কি একটা নাম দিয়ে সবাইকে প্যারেড করাবে রাজপথে। তারপর কিছুকে ভাসাবে, তো কিছুকে মিউজিয়াম এ রাখবে। সেই জন্যে তো অর্ধেক জায়গায় পাবলিককে বরণ করতেও দেয় নি, পাছে সবার ফেস প্যাক নষ্ট হয়ে যায়।

মায়ের টেনশন বাবাকে নিয়ে। শুধু যে নিজের চ্যালা দুটোকে নিয়ে র্্যাভ পার্টি করছে তা তো নয়, নিজের জামাই থেকে শুরু করে প্রজাপিতা বা বাকিদেরও নিশ্চয়ই ডেকে এনেছে। ওই ব্যাটা "অল ব্রহ্মাণ্ড রেডিও" টাকেও দলে টেনেছে শিওর। তাই ব্যাটা চুগলি করতেও, ইয়ে মানে, খবরও দিতে আসেনি। ঘর দোর চরম অগোছালো করে রেখেছে নিশ্চয়ই। তাই তো ক্ষমতামাতা ট্যাবলো মিছিলের ডেট লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন ফেলতেই, বাবা সুরসুর করে মেনে নিল। আগের কনফার্ম টিকিট টাও ক্যানসেল করিয়ে দিল। টিবড় মেয়ের কথাটা একবারও ভাবলো না।

সত্যিই বড়দির বড় জ্বালা। সেই মহালয়া থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবার এমনিই পা ব্যাথা। এবার আবার উনি আবার হুকুম না করে বসেন যে কমলাসনে বসা চলবে না। তারমধ্যে আবার কার্নিভালের দিন রাত দশটার পর কোজাগরী পূর্ণিমা লেগে যাচ্ছে। ফ্যাশন শো যদি টাইম মত শেষ না হয়, আর কেউ যদি রাত দশটার পর পুজোয় বসে যায়, তো স্নান করা তো দূর, ড্রেস চেঞ্জ করার ও টাইম পাবে না। তার থেকেও বেশি টেনশন, সত্য যুগ থেকে কলি, এই প্রথমবার কোজাগরী পূর্ণিমা তে দিদির মূর্তি না ভাসান দিয়ে দেয় কেউ।


ছোড়দি অবশ্য ফুল মুডে আছে। এমনিতেই ওর আসার টাইম মাঘ মাসে। তখন আবার শেলী পার্সির বোন কালিপিসি বইমেলা ও নিজের কদবেল জয়ী কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই বেশি টানা হিচড়া করে না ওকে নিয়ে। আর তা ছাড়াও ওনার মূলমন্ত্র তো অনেকটা হিরক রাজার মত। বইয়ের চাইতে ক্লাবের ছেলেগুলোকে দশ হাজার করে দিলে তারা বেশি খুশি হবে। ভোটের সময় কাজেও লাগবে।

কেতোর অবশ্য এবার অত টেনশন নেই। শুধু যদি কোনো বছর আশ্বিনের জায়গায় কার্তিক মাসে পুজো পরে, তাহলে এই এক্সটেন্ডেড পুজোতে খেয়ে খেয়ে যে ভুরি বেড়ে যায়, সেটা কে কার্তিক সংক্রান্তির আগে কি করে কমাবে, সেটাই ভাবছে।

সবার থেকে সেফ ও নিশ্চিন্ত আমি। এমনিতেই আমার দশ দিনের পুজো হয়। তাও মায়ের পুজোর আগেই। আগে তো শুধু বোম্বে তেই পুজো হত, তাই একদম লেটেস্ট ট্রেন্ডি পুজো শপিং সেরেই কৈলাশ ফিরতাম।

তবে একটা ব্যাপার ভাবাচ্ছে, ওই হরেন মুদির দলের লোকজনের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে পিসিদিদা না আবার বলে বসেন - "ও ব্যাটারা পূজা কা কি জানতা হ্যায়!! ওরা দশ দিন করতা হ্যায়, তো হাম "বিষ" দিন কোরেগা। ইনফ্যাক্ট, গ্রাভিটি অফ দা সময়কাল বলছে, উসকা পাঁচ দিন বাদ মে মহালয়া। ঘর গিয়ে ক্যা লাভ হোগা?" আমার কি বাপু!! হরেন মুদিরা লাড্ডু আর পাকোড়া দেবে তো ইনি চপ। আমার এতেই হয়ে যাবে।

শুধু তোদের একটাই অনুরোধ করবো, আমাদের কাছে চাকরি আশায় বা ব্যবসা বৃদ্ধির আশায় প্রার্থনা করিস না। দেখছিস ই তো, উই আর আউট অফ অফিস। তোরাও মেলা - খেলা - পুজো - ঈদ - ক্রিসমাস - নিউ ইয়ার - উৎসব নিয়ে মেতে থাক। একান্তই পকেটে টান পড়লে সিন্ডিকেট না আছে। ফুল অন এন্টারটেইনমেন্ট, চলছে চলবে।

© গেনু দাদা ইয়ে লেখা কা কপিরাইট হামাকে (অর্থাৎ সুব্রত চৌধুরী কে) দিয়া হ্যায়।

Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

তালশাঁস সন্দেশ

পুজো ও বামুন