বরোদায় বাঙালিয়ানা

"বিরিয়ানী মানে তো সেই ঝোল মাখা ভাত। ও তুমি খাওগে যাও, আমি নেই।"
"আহা, চলোই না দেখে আসি।"
"শোনো, এই "সু ছে"র দেশে যদি ভেবে থাকো বিরিয়ানী খাবে "চেছেপুছে", তাহলে সেই আমেদাবাদ চল। আনন্দ বরোদায় কিসসু পাইবে না।"

এত গঞ্জনা শুনেও একটা কাজ থাকায় মহারানী কে রাজি করিয়ে ফেললাম বরদা যাওয়ার জন্যে। হাজার হোক, পেটুক তো!! কি করি বলুন?? খোঁজ পেয়েছি, বাঙালি রাঁধুনি থেকে বাঙালি ওয়েটার নিয়ে বাঙালি রেস্টুরেন্ট খুলছেন এক বাঙালি ভদ্রমহিলা। শুভ উদ্বোধন। ছোটাও পেট্রল রথ।

কাজ কর্ম মিটিয়ে খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে পৌঁছলাম জায়গায়। প্রথমে মেন গেটের সিকিউরিটি ও বলতে পারে না। শেষে দূরে একটা দ্বারঘট ও তারপর ডাব দেখে বুঝলাম, ঐটাই হবে। সামনে দুটো বেতের মোড়া দরজার দুদিকে।

লালমোহনবাবু যেমন মরুভূমির মধ্যে রামদেওড়া যাবার আশার আলো দেখে "জয় ম্যা" বলে উঠের পিঠে উঠেছিলেন, গুজরাটের বুকে কলকাতার বিরিয়ানির আশায় আমিও প্রায় বুক ভরে দম নিয়ে "জয় মা" বলে কপাল ঠুকে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম।

পেহলে দর্শনধারী, বাদমে গুণবিচারী। ভিতরে ঢুকতেই একটা বাঙালিয়ানা ছুয়ে গেল। দেওয়ালে সত্যজিৎ থেকে আর ডি, কিশোর থেকে রবি ঠাকুর, সৌরভ থেকে রাজনৈতিক কার্টুন। কানে বাজে হেমন্ত। একটা বেশ "নিজের দ্যাশ" মার্কা ফিলিং এলো।




তাড়া ছিল, তাই বিরিয়ানী প্যাক করিয়ে রওনা দিলাম চটজলদি। যদিও বিল দেওয়ার স্টাইলটা ভালই লাগলো। ছোট্ট কূলোর মধ্যে মুখশুদ্ধির সাথে বিল।

৪৫ কিলোমিটার, গাড়ি চালালাম, না প্লেন জানিনা। অনেকদিন বাদে গাড়ির ভিতরটা চেনা গন্ধে যেন ভুরভুর করছিল। বাড়ি ফিরেই ঢেলে ফেললাম থালায়। একটা বড় আলু, ডিম, একটা লেগ পিস, গোটা তিনেক মাঝারি সাইজের পিস ও দুজনের মত পর্যাপ্ত চাল। হালকা ফ্লেভার, আলু এবং মাংস যেন রেশমের মত নরম ও মসৃণ। মুখে দিতেই গলে যাচ্ছে।


বহুদিন বাদে গুজরাটে কলকাতার মত বিরিয়ানী খেতে পেয়ে খুব ভালো লাগল। এতদিন বাঙালি রেস্টুরেন্ট শুধু আমেদাবাদ বাসীদের জন্যে ছিল, এবার বরোদা ও আনন্দ এর মানুষ ও তার ভাগীদার হতে পারবে।

Bong Flavours - বরোদা সেন্ট্রাল মলের ঠিক বিপরীতে, subway রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে ভিতর দিকে এগিয়ে যাবেন। সবার জন্যে রইল মেনু কার্ড ও কিছু ছবি। সামনের রবিবার কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে বাকিটা বলব।




Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

তালশাঁস সন্দেশ

পুজো ও বামুন