Posts

Showing posts from August, 2018

পালং পনির

Image
আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি ঘরে তখনও পনিরের প্রবেশ ঠিক ঘটেনি। কারণ না ছিল এত টিভি চ্যানেল, না ছিল বাঙালি সংস্কৃতির উপর হিন্দ বলয় এর গ্রাস। তখন ছানাই ছিল, রান্নাতেও। ছানার ডালনা, ছানার কোপ্তার রসা। আমাদের বাড়িতে মুরগির মাংস থেকে পিয়াজ রসুন সবই ছিল ব্রাত্য। ডিম বলতেও হাঁসের ডিম শুধু। খাসির মাংস রান্না হত হিং ফোড়ন দিয়ে। গোল বাঁধলো বড় ছেলের মাছ না খাওয়ার জন্যে। মাছ না খেলে ডিম, কিন্তু ডাক্তার রেগুলার হাঁসের ডিম মানা করলেন। ফলে, সদর দরজার চৌকাঠে "চাল পূর্ণ কলস উল্টে" প্রবেশ করল মুরগির ডিম ও তার দোসর পিয়াজ। যদিও জায়গা হল কয়লার ড্রামের পাশে, সিড়ির তলায়। ধীরে ধীরে দোসর টি খাসির মাংসে ও পেয়াজি বা স্যালাডে নিজের জায়গা করে নিতে পারলেও বাকি কোন রান্নায় তার প্রবেশাধিকার ছিল না। কয়লার উনুনের জায়গায় গ্যাস, টিউবওয়েল থেকে জল তুলে ভরা চৌবাচ্চার জলের বদলে পাম্প করে ট্যাংকে তোলা জল, ওয়াশিং মেশিন, এসবের সাথে সাথে পেঁয়াজ ও ডিম রান্নাঘরে স্থান পেলেও মুরগির মাংস ও রসুন আমাদের বাড়িতে প্রবেশাধিকার পায়নি নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি অবধি। এহেন সময় (নব্বই দশকের মাঝামাঝি) একদিন বাবা এসে বাড়ি...

বরোদায় বাঙালিয়ানা

Image
"বিরিয়ানী মানে তো সেই ঝোল মাখা ভাত। ও তুমি খাওগে যাও, আমি নেই।" "আহা, চলোই না দেখে আসি।" "শোনো, এই "সু ছে"র দেশে যদি ভেবে থাকো বিরিয়ানী খাবে "চেছেপুছে", তাহলে সেই আমেদাবাদ চল। আনন্দ বরোদায় কিসসু পাইবে না।" এত গঞ্জনা শুনেও একটা কাজ থাকায় মহারানী কে রাজি করিয়ে ফেললাম বরদা যাওয়ার জন্যে। হাজার হোক, পেটুক তো!! কি করি বলুন?? খোঁজ পেয়েছি, বাঙালি রাঁধুনি থেকে বাঙালি ওয়েটার নিয়ে বাঙালি রেস্টুরেন্ট খুলছেন এক বাঙালি ভদ্রমহিলা। শুভ উদ্বোধন। ছোটাও পেট্রল রথ। কাজ কর্ম মিটিয়ে খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে পৌঁছলাম জায়গায়। প্রথমে মেন গেটের সিকিউরিটি ও বলতে পারে না। শেষে দূরে একটা দ্বারঘট ও তারপর ডাব দেখে বুঝলাম, ঐটাই হবে। সামনে দুটো বেতের মোড়া দরজার দুদিকে। লালমোহনবাবু যেমন মরুভূমির মধ্যে রামদেওড়া যাবার আশার আলো দেখে "জয় ম্যা" বলে উঠের পিঠে উঠেছিলেন, গুজরাটের বুকে কলকাতার বিরিয়ানির আশায় আমিও প্রায় বুক ভরে দম নিয়ে "জয় মা" বলে কপাল ঠুকে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। পেহলে দর্শনধারী, বাদমে গুণবিচারী। ভিতরে ঢুকতেই একটা বাঙালি...

কড়াইয়ে মাখা ভাত

Image
"আমি রুটি পাউরুটি কিচ্ছু খাবো না মা।" "তো কি খাবি?" "ভাত, মাছু দিয়ে।" "মাছ দিয়ে ভাত, দুপুরে আর রাত্তিরে বাবা। এখন ঘী দিয়ে একটু ভাত মেখে দিচ্ছি, খেয়ে নে। লক্ষ্মী সোনা।" "নাআআআআআ" সকালের স্কুল, প্রাইমারি ক্লাস। বাড়ি ফিরতাম দশটা সোয়া দশটায়। এবং রোজকার বায়ানাক্কা। তখনও গ্যাস আসেনি বাড়িতে। মাটির উনুনে কয়লা ও ঘুটে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না হত। ভোরবেলা আমি স্কুলে চলে যেতাম। বাবা সকাল সকাল বাজার করে ফিরতেন। বাবার অফিস ও দাদার স্কুল, দুজনেই ভাত খেয়ে সকাল সোয়া নয়টায় বেরোত। দাদাকে স্কুল বাসে তুলে দিয়ে বাবা অফিসের জন্যে বাস ধরতেন। তার মধ্যে ভাত, ডাল, ভাজা, দু রকম তরকারি (দাদা মাছ খেতো না), মাছের ঝোল ও দুজনের টিফিন ঠিক বানিয়ে দিতেন মা। অতি ছোট বয়সে বাড়ির পাশে সকালের স্কুলে আমার দাখিলা করানোর অন্যতম কারণ ছিল নির্বিঘ্নে যাতে ওই সময়ে সব গুছিয়ে ফেলা যায়। মধ্যবিত্তের সংসারে গোনা গুনতি মাছ আসতো। তাই স্কুল থেকে ফিরে আমার এহেন বায়নক্কা র ঝড় সামলানো মায়ের পক্ষে একটু কঠিনই ছিল। কোনোদিন মাছের কাটা কুটো বা হয়তো মায়ের নিজের মাছ...

ফ্রেন্ডশিপ ডে।

Image
আজ ফ্রেন্ডশিপ ডে। বন্ধু ভাগ্য আমার বিশাল, সেই ছোটবেলা থেকেই। প্রথম সিগারেটে টান দেওয়া, স্কুলের পাঁচিল টপকে সিনেমা দেখতে যাওয়া, এয়ারপোর্ট হোটেল (হোটেল অশোকা) এর ব্যাকইয়ার্ড এ প্রাকটিসরত কোরিয়ান মহিলা আর্চারি টিম কে ঢিল ছুড়ে ডিস্টার্ব করা, নতুন নতুন শুরু হওয়া জেট এয়ারওয়েস এর মিনিস্কার্ট পরা এয়ারহোস্টেস দের দেখতে জানালার বাইরের স্ল‍্যাবে উঠে দাঁড়ানো, সবেতেই বন্ধুবান্ধব সাথে। কোথাও তারা পথপ্রদর্শক, তো কোথাও এই অধম। সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারে পথপ্রদর্শক আমি হলেও আমার এক পার্মানেন্ট জুড়িদার ছিল। স্কুল থেকে বেরিয়ে, এয়ারপোর্ট ১নং গেটের কাছে বাসস্ট্যান্ডের সাথেই একটা পান গুমটি ছিল, এখন যেখানে পার্কিং ফি কালেক্ট করার বুথ আছে। শ্যামল দার পান দোকান। গোল্ড ফ্লেক সিগারেটের (আমার) সাথে মিঠা পান (বন্ধুর)। না না, শেষ পাতের ব্যাপার নয়, বাড়িতে যাতে গন্ধ না পায়, সেই জন্যেই দুনিয়ার মশলা, কীমাম, গুলকন্দ, চাটনি ও আরো হাবিজাবি দিয়ে খয়ের ছাড়া মিষ্টি পান। একবার আমি ও বন্ধুটি শ্যামল দার দোকান থেকে দুটো গোল্ড ফ্লেক নিয়েছি। সিগারেট শেষ হলে মিঠা পান কেনা হবে। বন্ধুটি আমার জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে ন...