ব্যাচেলর থাকার জ্বালা
ব্যাচেলর ইঞ্জিনিয়ার, তায় আবার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। উড়িশ্যার কোরাপুট টাউনে পোস্টিং। সিনিয়ারও বাঙালি, বিবাহিত। চার বছরের এক পুত্র ও স্ত্রী নিয়ে ফ্যামিলি কোয়ার্টারে থাকেন। বাকি সব অন্যান্য রাজ্যের, মেসে আমি একা বাঙালি। অন্ধ্র ঘেঁষা জায়গায়, মেসের রান্না খেতে খেতে মুখে অরুচি ধরায় ঠিক করলাম আলাদা কোয়ার্টার নিয়ে নিজেই রান্না করে খাবো। সে কথা বলতেই সিনিয়ার দাদাটি বললেন - "প্রথম প্রথম ভালো লাগবে, তারপর খাটনি পোষাবে না কিন্তু। তার চাইতে তুই রবিবার দুপুরে আমার বাড়িতে খাবি। আর অন্যদিন দুপুরে তোদের মেসের আর আমার বাড়ির খাবার মিলিয়ে মিশিয়ে খাবো দুজনে।"
ভালো কথা। আমি বাপু খাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব বেহায়া। রবিবার সকাল এগারোটা নাগাদ গিয়ে হাজির। দাদাটি ওনার স্ত্রীর সাথে নাম বলে পরিচয় করালেও ছেলে জিজ্ঞেস করতেই নামের পিছনে "মামা" জুড়ে দিলেন। বুঝলাম, ব্যাচেলার হাওয়ার জ্বালা। কোনো রিস্কই নিলেন না উনি। যাক গে, আমি নিজের লক্ষ্যে অবিচল, খেতে এসেছি, সেটা হলেই চলবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটার সাথে বেশ মিশে গেলাম। সেও দেখি "মামু" "মামু" বলে ভালই আপন করে নিয়েছে। ঘন্টা দেড়েক বাদে খাবারের ডাক এলো। দাদাটি, আমি ও আমার নব্য ভাগ্নেকে একসাথেই খেতে দিয়েছে আমার সদ্য দিদি। আমাদের জন্যে ফ্রায়েড রাইস ও চিলি চিকেন। ভাগ্নের জন্যে প্লেন ভাত ডাল মাছ ভাজা। কিন্তু উনি আমাদের খাবার দেখে চিল চিৎকার জুড়লেন চিলি চিকেন খাবেন বলে। "বাবু" (তিনি বাবাকে বাবু বলেন), "মামু" বলে চিৎকার করে আমাদের দিকে কাতর আবেদন। তার মা তাকে দেখিয়ে চলেছে "এই দেখো বাবু, তোমার "ভাতু" আছে, "ডালু" আছে, "মাছু" আছে", তিনি জেদ করে বসেই আছেন। শেষে তার মা তাকে "ওটা কিন্তু খুব "ঝালু"" বলায় রণে ভঙ্গ দিলেন ও আমরা খাওয়া চালু করলাম।
চিলি চিকেন টা মুখে দিতেই দাদা ও আমার দুজনের মুখ, খাবারের স্বাদের মতই ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তাই দেখেই সদ্য দিদি তার ছেলেকে বললেন "মামু কে জিজ্ঞেস করো, খুব "ঝালু" হয়েছে কি? কিছু দেব?"
ভাগ্নে জিজ্ঞেস করতেই তার বাবা বলে উঠলেন - "আহ্!! বেচারা প্রথম দিন খেতে এসেছে। সত্যি কথা বললে যদি আর না জোটে!! তার মধ্যে তুমি আর তোমার মা যে ভাষায় কথা বলছ, যে জিনিসটা চাই, তা সেইভাবে বলতে গেলে তো এই অবস্থাতেই মেরে ধরে উঠিয়ে দেবে তোমার মা। আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।"
"কি হল? কি আনবে? ভাই, কি লাগবে বলো তো?"
নিজের উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রতিশব্দের জ্ঞানের উপর সেদিন খুব গর্ব হয়েছিল।
"লবণ"।
© সুব্রত চৌধুরী
ভালো কথা। আমি বাপু খাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব বেহায়া। রবিবার সকাল এগারোটা নাগাদ গিয়ে হাজির। দাদাটি ওনার স্ত্রীর সাথে নাম বলে পরিচয় করালেও ছেলে জিজ্ঞেস করতেই নামের পিছনে "মামা" জুড়ে দিলেন। বুঝলাম, ব্যাচেলার হাওয়ার জ্বালা। কোনো রিস্কই নিলেন না উনি। যাক গে, আমি নিজের লক্ষ্যে অবিচল, খেতে এসেছি, সেটা হলেই চলবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটার সাথে বেশ মিশে গেলাম। সেও দেখি "মামু" "মামু" বলে ভালই আপন করে নিয়েছে। ঘন্টা দেড়েক বাদে খাবারের ডাক এলো। দাদাটি, আমি ও আমার নব্য ভাগ্নেকে একসাথেই খেতে দিয়েছে আমার সদ্য দিদি। আমাদের জন্যে ফ্রায়েড রাইস ও চিলি চিকেন। ভাগ্নের জন্যে প্লেন ভাত ডাল মাছ ভাজা। কিন্তু উনি আমাদের খাবার দেখে চিল চিৎকার জুড়লেন চিলি চিকেন খাবেন বলে। "বাবু" (তিনি বাবাকে বাবু বলেন), "মামু" বলে চিৎকার করে আমাদের দিকে কাতর আবেদন। তার মা তাকে দেখিয়ে চলেছে "এই দেখো বাবু, তোমার "ভাতু" আছে, "ডালু" আছে, "মাছু" আছে", তিনি জেদ করে বসেই আছেন। শেষে তার মা তাকে "ওটা কিন্তু খুব "ঝালু"" বলায় রণে ভঙ্গ দিলেন ও আমরা খাওয়া চালু করলাম।
চিলি চিকেন টা মুখে দিতেই দাদা ও আমার দুজনের মুখ, খাবারের স্বাদের মতই ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তাই দেখেই সদ্য দিদি তার ছেলেকে বললেন "মামু কে জিজ্ঞেস করো, খুব "ঝালু" হয়েছে কি? কিছু দেব?"
ভাগ্নে জিজ্ঞেস করতেই তার বাবা বলে উঠলেন - "আহ্!! বেচারা প্রথম দিন খেতে এসেছে। সত্যি কথা বললে যদি আর না জোটে!! তার মধ্যে তুমি আর তোমার মা যে ভাষায় কথা বলছ, যে জিনিসটা চাই, তা সেইভাবে বলতে গেলে তো এই অবস্থাতেই মেরে ধরে উঠিয়ে দেবে তোমার মা। আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।"
"কি হল? কি আনবে? ভাই, কি লাগবে বলো তো?"
নিজের উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রতিশব্দের জ্ঞানের উপর সেদিন খুব গর্ব হয়েছিল।
"লবণ"।
© সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment