ফুটবল বিশ্বকাপের রাতজাগা ও ফিস্টি
১৯৯৮। ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল।
অনেক আশা ছিল সেবার, সেমিফাইনাল হবে আর্জেন্টিনা - ব্রাজিল। ডেনমার্ক কে হারিয়ে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উঠেছে। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে দুর্ধর্ষ শুরু করেও কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মিনিটে বার্গক্যাম্প এর গোলে বিদায় নিয়েছে।
আমি চিরকালই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে খিস্তি খেউর থেকে দূরে থাকতাম। কারণ মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্লাবে গিয়ে রাতে খেলা দেখা, ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে ও আমার বাবার কানে গেলে সেটা বন্ধ হবে। কোয়ার্টার ফাইনাল এর পর থেকেই প্যাক খেয়ে চলেছি আমরা। এদিকে ব্রাজিল সেমিফাইনাল পেরিয়ে ফাইনালে উঠতেই পাড়ার ব্রাজিল সমর্থকেরা ঠিক করল ফাইনালের সময় ক্লাবে মটন ও ভাত খাওয়াবে সবাইকে।
যথারীতি ক্লাবের সদস্যরা দু ভাগ। আর্জেন্টিনার অন্ধ সাপোর্টাররা খাবে না। এদিকে মূল ব্যাপার হল ক্লাবের ফিস্টে আমরা যে কজন মোটামুটি রান্না করে থাকি, সবই আর্জেন্টিনার দিকে। শেষ পর্যন্ত আমি নরমপন্থী হওয়ায় আমাকেই প্রস্তাব দিল রান্না করে দেওয়ার। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমার আবার চিরকালই বাছ বিচার কম। বাতিস্তুতা বা বেবেতো বা জিদান কেউই আমায় খাওয়াবে না, যেই জিতুক রাত বারোটায় ক্লাবে গরম ভাত ও খাসির মাংস খেয়েদেয়ে খেলা দেখার মজা, তাও আবার ফ্রীতে, সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। লোকজনের আমার উপরে ভরসা করার আরেকটা কারণ হল, আমি কারনসুধা থেকে দূরেই থাকতাম। শুধু চাট এর ভাগ দিলেই হল। প্রায় ৬ কেজি খাসির মাংস (তাতে আরো ২ কিলো আলু এক্সট্রা), কিছুটা কষা (মেটে সহ) ও বাকিটা ঝোল। ভাত বানাবে অন্যরা।
এদিকে আমি ও আর দুজন আর্জেন্টিনা সমর্থক বাদে বাকিরা বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া করে জড়ো হয়েছে। আমরাও আয়েশ করে ভাত মাংস খেয়েদেয়ে সাড়ে বারোটা নাগাদ খেলা দেখতে বসলাম। খেলা শুরু হল, সাথে দু দলের সমর্থকদের গালাগালিও। জিদান প্রথম গোল দিতেই এক অত্যুৎসাহী আর্জেন্টিনা সমর্থক দে দৌড়। ভি আই পি র উপর এক চেনাশোনা লোকের মুরগির মাংসের দোকান ছিল, সেই রাত একটায় তার বাড়িতে হামলা। গোটা মুরগী কেটে নিয়ে হাজির। অন্য কয়েকজন ততক্ষণে ক্লাবের সামনের পানের দোকানের বিহারী ছেলেগুলোর থেকে তেল মশলা পিয়াজ রসুন জোগাড় করে নিয়েছে। হাফ টাইম হতে হতে দু গোল আর দ্বিতীয়বার রান্নার ডাক। রাত দেড়টায় আবার চাপালাম রান্না। খেলা শেষ হতে হতে মুরগির কষা দিয়ে কিছু আর্জেন্টিনীয় সমর্থক রঙিন জলে ডুব দিলেন। আর আমি নিজের ভাগের চাট গলাধঃকরণ করে ধরলাম বাড়ির পথ।
অবশ্য খাসি মুরগী একসাথে পেটে গিয়ে পরদিন সকালে আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় চক্রান্ত করে দু দিনের জন্যে বাঁ হাতের জল শুকোতে দেয় নি।
©সুব্রত চৌধুরী
Comments
Post a Comment