Posts

Showing posts from July, 2018

ব্যাচেলর থাকার জ্বালা

Image
ব্যাচেলর ইঞ্জিনিয়ার, তায় আবার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। উড়িশ্যার কোরাপুট টাউনে পোস্টিং। সিনিয়ারও বাঙালি, বিবাহিত। চার বছরের এক পুত্র ও স্ত্রী নিয়ে ফ্যামিলি কোয়ার্টারে থাকেন। বাকি সব অন্যান্য রাজ্যের, মেসে আমি একা বাঙালি। অন্ধ্র ঘেঁষা জায়গায়, মেসের রান্না খেতে খেতে মুখে অরুচি ধরায় ঠিক করলাম আলাদা কোয়ার্টার নিয়ে নিজেই রান্না করে খাবো। সে কথা বলতেই সিনিয়ার দাদাটি বললেন - "প্রথম প্রথম ভালো লাগবে, তারপর খাটনি পোষাবে না কিন্তু। তার চাইতে তুই রবিবার দুপুরে আমার বাড়িতে খাবি। আর অন্যদিন দুপুরে তোদের মেসের আর আমার বাড়ির খাবার মিলিয়ে মিশিয়ে খাবো দুজনে।" ভালো কথা। আমি বাপু খাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব বেহায়া। রবিবার সকাল এগারোটা নাগাদ গিয়ে হাজির। দাদাটি ওনার স্ত্রীর সাথে নাম বলে পরিচয় করালেও ছেলে জিজ্ঞেস করতেই নামের পিছনে "মামা" জুড়ে দিলেন। বুঝলাম, ব্যাচেলার হাওয়ার জ্বালা। কোনো রিস্কই নিলেন না উনি। যাক গে, আমি নিজের লক্ষ্যে অবিচল, খেতে এসেছি, সেটা হলেই চলবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটার সাথে বেশ মিশে গেলাম। সেও দেখি "মামু" "মামু" বলে ভালই আপন করে ...

ইঁদুর দৌড় - শেষ পর্ব

Image
ধীরে ধীরে গঞ্জনা গুলো গা সওয়া হয়ে যায় সুদীপের। ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে অনেকক্ষন সময় কমন রুমে - ইউনিয়ন রুমে কাটিয়ে বা মালিনীর সাথে কফি হাউসে বসে গল্প করে তবে বাড়ি ফিরত সুদীপ। দুটো টিউশন ও নিয়েছে হাতখরচ চালানোর জন্যে, সপ্তাহে চারদিন তাই একেবারে খাওয়ার সময় বাড়ি ফেরা। মালিনী আর সুদীপ কে একসাথে দেখে অনেকেই ফিসফাস করত। একদিন কমন রুমে বরুণ বলেই ফেলল মুখের উপর। "ভাই, তোর ক্যালি আছে মানতে হবে। আমাদের কাল ঘাম ছুটে গেল ক্লাসের বা জুনিয়ার মেয়েগুলোকে পটাতে, আর তুই কিনা প্রফেসরকে নিয়ে ফষ্টি নষ্টি করে বেরাচ্ছিস।" এক ঘুষিতে বরুণের চোয়াল ঘুরিয়ে দিয়েছিল সুদীপ। অবশ্য বরুণ ও পাল্টা হাত চালায়। বাকিরা মিলে অনেক কষ্টে ছাড়ায় দুজনকে। পরন্ত বিকেলে কফি হাউসে সুদীপের মুখ চোখ দেখেই মালিনী বুঝতে পারে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। "কি হয়েছে?" "তুমি বিয়ে করবে না?" "মানে? কি? বলবে কি হয়েছে?" মাথা নিচু করে কমন রুমের কথাগুলো বলে সুদীপ, তাকায় মালিনীর দিকে। ভাবান্তর চোখে পড়ে না কিছু। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে মালিনীর প্রতি। "শুধু দুটো লিকার চা বলি? তোমা...

ইঁদুর দৌড় - পর্ব ১

Image
খড়গপুর থেকে ট্রেন চলে গেছে বহুদিন। সুদীপ কিছুকাল অপেক্ষা করলেও, বন্ধ দরজা আর খোলেনি। সেকেন্ড ইয়ার অবধি মৌমিতার থেকে টুকটাক খবর পেলেও সুদীপ বুঝে গেছিল দরজা চিরতরে বন্ধই হয়ে গেছে। "ইঁদুর দৌড়ে সামিল না হয়ে বোধহয় ভুলই করে ফেলেছি।" - নিজের দাদাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরি জয়েন করতে দেখে একটু হতাশ হয়ে পড়ে সুদীপ। বাড়িতে মা - বাবা বা আত্মীয়স্বজন সকলেই ঠারে ঠারে যেন বুঝিয়ে যায়, সে মস্ত বোকা। পড়াশোনায় ভাটা না পড়লেও, প্রাণোচ্ছল ছেলেটা আস্তে আস্তে যেন হারিয়ে যেতে থাকে। ব্যাপারটা নজর এড়ায় না মালিনীর। মালিনী মন্ডল, ২৮ বছর বয়স, অর্গানিক কেমিস্ট্রির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। গত বছর জয়েন করেছেন কলেজে। কলেজের প্রথম ক্লাস ছিল সুদীপ দের ক্লাসেই। এবং ছাত্র ছাত্রীরাই উল্টে তার ক্লাস নিয়ে নিয়েছিল সেদিন। অগ্রণী ভূমিকায় ছিল সুদীপ, তার বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নবাণ নিয়ে। পরবর্তী পর্যায়ে শক্ত হাতে পড়ানোর সুনাম কুড়িয়েছেন যদিও, কিন্তু সুদীপকে মনে রেখেছিলেন ঠিক। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চালু হলেই সুদীপের মাথার ক্যারা পোকাটা একটু নড়ে ওঠে। ক্লাস কামাই ...

ফুটবল বিশ্বকাপের রাতজাগা ও ফিস্টি

Image
১৯৯৮। ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল। অনেক আশা ছিল সেবার, সেমিফাইনাল হবে আর্জেন্টিনা - ব্রাজিল। ডেনমার্ক কে হারিয়ে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উঠেছে। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে দুর্ধর্ষ শুরু করেও কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মিনিটে বার্গক্যাম্প এর গোলে বিদায় নিয়েছে। আমি চিরকালই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে খিস্তি খেউর থেকে দূরে থাকতাম। কারণ মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্লাবে গিয়ে রাতে খেলা দেখা, ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে ও আমার বাবার কানে গেলে সেটা বন্ধ হবে। কোয়ার্টার ফাইনাল এর পর থেকেই প্যাক খেয়ে চলেছি আমরা। এদিকে ব্রাজিল সেমিফাইনাল পেরিয়ে ফাইনালে উঠতেই পাড়ার ব্রাজিল সমর্থকেরা ঠিক করল ফাইনালের সময় ক্লাবে মটন ও ভাত খাওয়াবে সবাইকে। যথারীতি ক্লাবের সদস্যরা দু ভাগ। আর্জেন্টিনার অন্ধ সাপোর্টাররা খাবে না। এদিকে মূল ব্যাপার হল ক্লাবের ফিস্টে আমরা যে কজন মোটামুটি রান্না করে থাকি, সবই আর্জেন্টিনার দিকে। শেষ পর্যন্ত আমি নরমপন্থী হওয়ায় আমাকেই প্রস্তাব দিল রান্না করে দেওয়ার। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমার আবার চিরকালই বাছ বিচার কম। বাতিস্তুতা বা বেবেতো বা জিদান কেউই আমায় খাওয়াবে না, যেই জিতুক রাত ব...