ঘুঙুরের আওয়াজ (ভূতের গল্প)
১৯৬৯ সাল। বাজার এলাকার একটি পুরনো বাড়িতে ব্যাংকের ব্রাঞ্চ অফিস। সদ্য এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পেয়ে ওই ব্রাঞ্চের দায়িত্ব বর্তেছে সুবীর বাবুর উপর।
তখন কম্পিউটার তো দূর অস্ত, ক্যালকুলেটর বলতেও ইয়া বড়ো একটি মেশিন। তাও সব ব্রাঞ্চে থাকত না। লোন থেকে শুরু করে জমা, সুদ, সব হিসেব কাগজে কলমে। কর্মিসংখ্যা কম থাকায় বাড়তি কাজ করতে হ'ত অবিবাহিত সুবীর বাবুকে। পাঁচটায় সবাই বেরিয়ে গেলেও ব্রাঞ্চ হেড হিসেবে একাই বসে বসে কাজ করতেন অনেকক্ষন। অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে প্রায়ই সন্ধ্যে সাতটা - সাড়ে সাতটা।
তিনতলা বাড়ির একতলাতে দুটো দোকান ও একটা গ্যারেজ, দোতলায় ব্যাংককে ভাড়া দিয়ে উপরতলা বাড়িওয়ালার। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক পরিবার নিয়ে মাঝে সাঁঝে আসেন, থাকেন দিল্লিতে। আর আছে ব্যাংকের ও বাড়ির দারোয়ান, রাম সিং। সিড়ির তলায় ছোট্ট কুঠুরিতে থাকে মরচে ধরা দো নলা বন্দুক নিয়ে, নিজে রান্না করে খায়। সুবীরবাবু সন্ধ্যের পর কাজ করলে, কলাপসিবল গেটটা বন্ধ করে সিড়ির তলায় গিয়ে রাতের রান্না করে। কাজ শেষ করে সুবীরবাবু ডাকলে ওনাকে বার করে দরজায় তালা লাগিয়ে তবে ছুটি।
সূর্যাস্তের পর সুবীরবাবু কাজ করতে করতে মাঝে মধ্যেই শুনতে পান ঘুঙুরের আওয়াজ। ঠিক যেন কেউ নাচছে বা নাচের প্র্যাকটিস করছে। প্রথম প্রথম আসে পাশের কোন বাড়ি থেকে আওয়াজ আসছে ভেবেছিলেন। কিন্তু ক্রমে যেন ধারণা হ'ল, আওয়াজটা আশপাশে বা উপরের তলায় হচ্ছে। একদিন সন্ধ্যেবেলা আওয়াজ শুনে রাম সিং কে ডেকে তিনতলায় উঠে দেখলেন দরজা তালাবন্ধ। আওয়াজটাও যেন মিলিয়ে গেল।
রাম সিং মিটিমিটি হাসে। "কুছ আওয়াজ শুনে থা ক্যা বাবু?" সুবীরবাবু চুপ দেখে আবার বলে "ঘুংরু কা?" চমকে ওঠেন সুবীরবাবু। বলে কী? রাম সিং তার মানে জানে ঘটনাটা?
"তুমি জানলে কি করে?"
"আমি জানে বাবু। ইতনা বরষ হুই গায়া, হামকা মালুম হে।"
"কি জানো?" চেপে ধরেন সুবীরবাবু।
বেশি ভাঙে না। "ও আচ্ছি হ্যায়, কাভি ভি কিসিকা কোই নুকসান নেহি কর তি।"
সুবীরবাবু আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। পরদিন থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যেই কাজকর্ম শেষ করে সকলের সাথেই রওনা হতেন। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা মন থেকে মুছে ফেলেছিলেন সুবীরবাবু, না জানি রাম সিং কি শুনে কি বলেছে। হয়তো নিজেরই মনের ভুল, কি শুনতে কি শুনেছেন।
বছর শেষের কাজের চাপ থাকায় আবার সুবীরবাবুর দেরি হতে থাকে। একদিন রাত প্রায় আটটা, আবার যেনো ঘুঙুরের আওয়াজ শুনলেন মনে হলো। স্ট্রং রুমে ঢুকে ক্যাশ মেলাচ্ছিলেন ক্যাশিয়ারের সাথে, আলগোছে দেওয়ালে হেলান দিতেই মনে হ'ল কেউ যেন জড়িয়ে ধরেছে। ধড়াস করে ওঠে বুক, চমকে ছিটকে ঘরের মাঝখানে চলে আসেন। কিন্তু কাউকে কিছু বলেননি। কে কি ভাববে তাই। তবে এর পর থেকে মাঝে মধ্যেই আওয়াজ শুনতে পেতেন। স্ট্রং রুমে গেলেই মনে হত কেউ যেন হাত ধরে টানছে।
সকল কর্মী ও সুবীরবাবুর নেতৃত্বে ব্রাঞ্চ এর ব্যবসা ভালই বেড়েছে গতবছর। নতুন অর্থবর্ষে সুবীরবাবু হেড অফিসে প্রস্তাব দিলেন ব্রাঞ্চে লকার বসানোর, যাতে গ্রাহকেরা গয়না বা অন্য মূল্যবান সামগ্রী রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে। অবশ্যই ভাড়া দিয়ে আর তাতেই তো লাভ বাড়বে ব্যাংকের। প্রস্তাব পাস হতে ব্যাংকের ইঞ্জিনিয়ার আসে মাপঝোক করতে, নতুন লকার রুম তৈরি করার জন্যে। রিপোর্ট দেয় স্ট্রং রুম অন্য ঘরে শিফট করে রেকর্ড রুম ও বর্তমান স্ট্রং রুমের মধ্যবর্তী দেওয়ালটা ভেঙে লকার রুম বানানোর।
সুবীরবাবু যোগাযোগ করলেন বাড়িওয়ালার সাথে। ব্যাংকের প্রস্তাব জানিয়ে বললেন, ব্যাংক মাসে দশ টাকা করে ভাড়া বাড়াতে রাজি আছে। সেই শুনে উনি রাজি হলেন। শর্ত একটাই, পুরোনো বাড়ি, তার যেনো ক্ষতি না হয়। ইঞ্জিনিয়াররা আশ্বস্ত করায় স্ট্রং রুম শিফট করে ও রেকর্ড রুম থেকে সব ফাইল অন্যত্র রাখা হলো। অনেক পুরানো ফাইল বাইরে আসায়, সেদিন অনেক রাত অবধি বসেছিলেন সুবীরবাবু। ঘুঙুরের আওয়াজ মৃদুমন্দ পাচ্ছিলেন, তাও কাজে ডুবে গেছিলেন। হঠাৎ চমকে উঠলেন, কে যেনো হাত বুলিয়ে দিলো মাথায়। টেবিল থেকে উঠে দরজার কাছে এলেন সিগারেট খেতে।
কিছুতেই দেশলাইকাঠির আগুন থাকে না, শুধু নিভে যায়। দরজার হাওয়া থেকে আড়াল হতে পুরোনো রেকর্ড রুমের কাছে গিয়ে সিগারেট জ্বালাতেই, হঠাৎই ঘুঙুরের আওয়াজ যেন বেজে ওঠে। কেউ যেন তার হাত ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়। কোনোমতে সেখান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে আসেন, ফাইল পত্তর বন্ধ করে বাড়ি।
পরদিন দেওয়াল ভাঙার জন্যে দুজন সান্ত্রা আসে, রাম সিং এর ডিউটি পড়ে ওখানেই দাড়ানোর। ব্যাংকের ভিতরে কাজ, বাইরের লোকের উপর কড়া নজরদারি। দেওয়াল কিছুটা ভাঙতেই সমবেত আর্তনাদ। সুবীর বাবু, অন্যান্য কর্মচারী ও গ্রাহকেরা দৌড়ে যেতে নজরে আসে, মাটিতে রাম সিং ও দুই সান্ত্রার অচৈতন্য দেহ। দেওয়ালের দিকে তাকাতেই দৃশ্য আরো ভয়ংকর, একটা কঙ্কালের হাত বেরিয়ে আছে ভাঙা জায়গায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই রাম সিং ও বাকি দুজনের মুখে চোখে জল ছিটিয়ে হুশ ফেরানো হয়। পুলিশের লোকজন দেওয়াল ভাঙলে বেরিয়ে আসে এক জোড়া কঙ্কাল। ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্ট থেকে পরে জানা যায় যে একটি পুরুষের ও অন্যটি মহিলার। এবং প্রায় ২৫-৩০ বছরের পুরানো। পুলিশ তৎকালীন বাড়ির মালিকের খোঁজ চালু করে দু দিন বাদে অকুস্থল ছেড়ে দেয় ব্যাংককে।
বেশ কয়েকদিন বাদে, এক সন্ধ্যেবেলা ব্যাংকে একাই ছিলেন সুবীর বাবু। আবার যেন ঘুঙুরের আওয়াজ শুনলেন। তবে এ আওয়াজ যেন আগের থেকে অনেক প্রাণবন্ত।
"রাম সিং? উপরে আসো একটু।"
"বোলিয়ে বাবু।"
"আবার ঘুঙুরের আওয়াজ শুনলাম। তুমি কি জানো বলো তো? সত্যি কথা বলো, আমি কাউকে কিছু বলব না।"
"মেরে পিতাজি ইহা কোয়লা দেতে থে। উনসে জো শুনা থা, উৎনা হি মালুম হে বাবু। বহত সাল পেহলে, ই কোঠি এক জমিনদার কা থা। বানারস সে এক নাচনেওয়ালি কো বড়া জামিনদার সাব লেকে আয়ে থে। বহত খুবসুরত থি। লেকিন বহোত কম উমর থি। ছোটে হুজুর অর ও, দোনো এক দুসরে সে প্যায়ার কর বৈঠে। বাপ কো জব পাতা চলা, তো নাচনেওয়ালি কো লেকে বাপ বেটে মে বহোত ঝাগড়া হুয়া। একদিন বড়া হুজুর দোনো কো রঙ্গে হাত পকর লিয়ে থে। উসকে বাদ দোনো কভি নেহি দিখে। সবকো ইয়েহি পাতা থা কি ছোটা হুজুর উসকো লেকে ভাগ গায়া। ফির কুছ মহিনে বাদ বড়ে সাব সিড়ি সে নিচে যা রহে থে, কাহা সে টুটা হুয়া ঘুংরু পড়া থা, পেইর কি নিচে আয়া অর ফিসাল কে সিড়ি সে গির কে মর গয়ে। উসকে বাদ উনকা বিবি ঘর বেচকে কাহি চলি গয়ী। জিসনে খারীদা থা, ওহ কুছ দিন কে বাদ ফির বেচ দিয়ে অভি কে সাব কো।"
"তুমি কি করে জানলে যে ও কারোর ক্ষতি করে না?"
"হাম যাব ইহা কাম কারনে আয়ে, তো হাম কো ভি আওয়াজ শুনাই দেনে লাগা। বহুত বার আইসা লাগা কি হামকো হাত পাকর কর উধার লে যা না চাহতি হে। হাম কো তভি সে সক থা কি ইয়ে নাচনেওয়ালি কি হি আত্মা হে। মে তো হর রোজ ইয়েহী রেহতা হূ, ইয়েহি রাত কো শোতা হূ। পর মেরে কো আজ তক কোই নুকসান নেহি কিয়া। ইসিলিয়ে বোলা থা বাবু।"
রাত প্রায় নটা। নিঃশব্দে বাড়ির পথ ধরেন সুবীর বাবু।
©সুব্রত চৌধুরী
তখন কম্পিউটার তো দূর অস্ত, ক্যালকুলেটর বলতেও ইয়া বড়ো একটি মেশিন। তাও সব ব্রাঞ্চে থাকত না। লোন থেকে শুরু করে জমা, সুদ, সব হিসেব কাগজে কলমে। কর্মিসংখ্যা কম থাকায় বাড়তি কাজ করতে হ'ত অবিবাহিত সুবীর বাবুকে। পাঁচটায় সবাই বেরিয়ে গেলেও ব্রাঞ্চ হেড হিসেবে একাই বসে বসে কাজ করতেন অনেকক্ষন। অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে প্রায়ই সন্ধ্যে সাতটা - সাড়ে সাতটা।
তিনতলা বাড়ির একতলাতে দুটো দোকান ও একটা গ্যারেজ, দোতলায় ব্যাংককে ভাড়া দিয়ে উপরতলা বাড়িওয়ালার। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক পরিবার নিয়ে মাঝে সাঁঝে আসেন, থাকেন দিল্লিতে। আর আছে ব্যাংকের ও বাড়ির দারোয়ান, রাম সিং। সিড়ির তলায় ছোট্ট কুঠুরিতে থাকে মরচে ধরা দো নলা বন্দুক নিয়ে, নিজে রান্না করে খায়। সুবীরবাবু সন্ধ্যের পর কাজ করলে, কলাপসিবল গেটটা বন্ধ করে সিড়ির তলায় গিয়ে রাতের রান্না করে। কাজ শেষ করে সুবীরবাবু ডাকলে ওনাকে বার করে দরজায় তালা লাগিয়ে তবে ছুটি।
সূর্যাস্তের পর সুবীরবাবু কাজ করতে করতে মাঝে মধ্যেই শুনতে পান ঘুঙুরের আওয়াজ। ঠিক যেন কেউ নাচছে বা নাচের প্র্যাকটিস করছে। প্রথম প্রথম আসে পাশের কোন বাড়ি থেকে আওয়াজ আসছে ভেবেছিলেন। কিন্তু ক্রমে যেন ধারণা হ'ল, আওয়াজটা আশপাশে বা উপরের তলায় হচ্ছে। একদিন সন্ধ্যেবেলা আওয়াজ শুনে রাম সিং কে ডেকে তিনতলায় উঠে দেখলেন দরজা তালাবন্ধ। আওয়াজটাও যেন মিলিয়ে গেল।
রাম সিং মিটিমিটি হাসে। "কুছ আওয়াজ শুনে থা ক্যা বাবু?" সুবীরবাবু চুপ দেখে আবার বলে "ঘুংরু কা?" চমকে ওঠেন সুবীরবাবু। বলে কী? রাম সিং তার মানে জানে ঘটনাটা?
"তুমি জানলে কি করে?"
"আমি জানে বাবু। ইতনা বরষ হুই গায়া, হামকা মালুম হে।"
"কি জানো?" চেপে ধরেন সুবীরবাবু।
বেশি ভাঙে না। "ও আচ্ছি হ্যায়, কাভি ভি কিসিকা কোই নুকসান নেহি কর তি।"
সুবীরবাবু আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। পরদিন থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যেই কাজকর্ম শেষ করে সকলের সাথেই রওনা হতেন। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা মন থেকে মুছে ফেলেছিলেন সুবীরবাবু, না জানি রাম সিং কি শুনে কি বলেছে। হয়তো নিজেরই মনের ভুল, কি শুনতে কি শুনেছেন।
বছর শেষের কাজের চাপ থাকায় আবার সুবীরবাবুর দেরি হতে থাকে। একদিন রাত প্রায় আটটা, আবার যেনো ঘুঙুরের আওয়াজ শুনলেন মনে হলো। স্ট্রং রুমে ঢুকে ক্যাশ মেলাচ্ছিলেন ক্যাশিয়ারের সাথে, আলগোছে দেওয়ালে হেলান দিতেই মনে হ'ল কেউ যেন জড়িয়ে ধরেছে। ধড়াস করে ওঠে বুক, চমকে ছিটকে ঘরের মাঝখানে চলে আসেন। কিন্তু কাউকে কিছু বলেননি। কে কি ভাববে তাই। তবে এর পর থেকে মাঝে মধ্যেই আওয়াজ শুনতে পেতেন। স্ট্রং রুমে গেলেই মনে হত কেউ যেন হাত ধরে টানছে।
সকল কর্মী ও সুবীরবাবুর নেতৃত্বে ব্রাঞ্চ এর ব্যবসা ভালই বেড়েছে গতবছর। নতুন অর্থবর্ষে সুবীরবাবু হেড অফিসে প্রস্তাব দিলেন ব্রাঞ্চে লকার বসানোর, যাতে গ্রাহকেরা গয়না বা অন্য মূল্যবান সামগ্রী রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে। অবশ্যই ভাড়া দিয়ে আর তাতেই তো লাভ বাড়বে ব্যাংকের। প্রস্তাব পাস হতে ব্যাংকের ইঞ্জিনিয়ার আসে মাপঝোক করতে, নতুন লকার রুম তৈরি করার জন্যে। রিপোর্ট দেয় স্ট্রং রুম অন্য ঘরে শিফট করে রেকর্ড রুম ও বর্তমান স্ট্রং রুমের মধ্যবর্তী দেওয়ালটা ভেঙে লকার রুম বানানোর।
সুবীরবাবু যোগাযোগ করলেন বাড়িওয়ালার সাথে। ব্যাংকের প্রস্তাব জানিয়ে বললেন, ব্যাংক মাসে দশ টাকা করে ভাড়া বাড়াতে রাজি আছে। সেই শুনে উনি রাজি হলেন। শর্ত একটাই, পুরোনো বাড়ি, তার যেনো ক্ষতি না হয়। ইঞ্জিনিয়াররা আশ্বস্ত করায় স্ট্রং রুম শিফট করে ও রেকর্ড রুম থেকে সব ফাইল অন্যত্র রাখা হলো। অনেক পুরানো ফাইল বাইরে আসায়, সেদিন অনেক রাত অবধি বসেছিলেন সুবীরবাবু। ঘুঙুরের আওয়াজ মৃদুমন্দ পাচ্ছিলেন, তাও কাজে ডুবে গেছিলেন। হঠাৎ চমকে উঠলেন, কে যেনো হাত বুলিয়ে দিলো মাথায়। টেবিল থেকে উঠে দরজার কাছে এলেন সিগারেট খেতে।
কিছুতেই দেশলাইকাঠির আগুন থাকে না, শুধু নিভে যায়। দরজার হাওয়া থেকে আড়াল হতে পুরোনো রেকর্ড রুমের কাছে গিয়ে সিগারেট জ্বালাতেই, হঠাৎই ঘুঙুরের আওয়াজ যেন বেজে ওঠে। কেউ যেন তার হাত ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়। কোনোমতে সেখান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে আসেন, ফাইল পত্তর বন্ধ করে বাড়ি।
পরদিন দেওয়াল ভাঙার জন্যে দুজন সান্ত্রা আসে, রাম সিং এর ডিউটি পড়ে ওখানেই দাড়ানোর। ব্যাংকের ভিতরে কাজ, বাইরের লোকের উপর কড়া নজরদারি। দেওয়াল কিছুটা ভাঙতেই সমবেত আর্তনাদ। সুবীর বাবু, অন্যান্য কর্মচারী ও গ্রাহকেরা দৌড়ে যেতে নজরে আসে, মাটিতে রাম সিং ও দুই সান্ত্রার অচৈতন্য দেহ। দেওয়ালের দিকে তাকাতেই দৃশ্য আরো ভয়ংকর, একটা কঙ্কালের হাত বেরিয়ে আছে ভাঙা জায়গায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই রাম সিং ও বাকি দুজনের মুখে চোখে জল ছিটিয়ে হুশ ফেরানো হয়। পুলিশের লোকজন দেওয়াল ভাঙলে বেরিয়ে আসে এক জোড়া কঙ্কাল। ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্ট থেকে পরে জানা যায় যে একটি পুরুষের ও অন্যটি মহিলার। এবং প্রায় ২৫-৩০ বছরের পুরানো। পুলিশ তৎকালীন বাড়ির মালিকের খোঁজ চালু করে দু দিন বাদে অকুস্থল ছেড়ে দেয় ব্যাংককে।
বেশ কয়েকদিন বাদে, এক সন্ধ্যেবেলা ব্যাংকে একাই ছিলেন সুবীর বাবু। আবার যেন ঘুঙুরের আওয়াজ শুনলেন। তবে এ আওয়াজ যেন আগের থেকে অনেক প্রাণবন্ত।
"রাম সিং? উপরে আসো একটু।"
"বোলিয়ে বাবু।"
"আবার ঘুঙুরের আওয়াজ শুনলাম। তুমি কি জানো বলো তো? সত্যি কথা বলো, আমি কাউকে কিছু বলব না।"
"মেরে পিতাজি ইহা কোয়লা দেতে থে। উনসে জো শুনা থা, উৎনা হি মালুম হে বাবু। বহত সাল পেহলে, ই কোঠি এক জমিনদার কা থা। বানারস সে এক নাচনেওয়ালি কো বড়া জামিনদার সাব লেকে আয়ে থে। বহত খুবসুরত থি। লেকিন বহোত কম উমর থি। ছোটে হুজুর অর ও, দোনো এক দুসরে সে প্যায়ার কর বৈঠে। বাপ কো জব পাতা চলা, তো নাচনেওয়ালি কো লেকে বাপ বেটে মে বহোত ঝাগড়া হুয়া। একদিন বড়া হুজুর দোনো কো রঙ্গে হাত পকর লিয়ে থে। উসকে বাদ দোনো কভি নেহি দিখে। সবকো ইয়েহি পাতা থা কি ছোটা হুজুর উসকো লেকে ভাগ গায়া। ফির কুছ মহিনে বাদ বড়ে সাব সিড়ি সে নিচে যা রহে থে, কাহা সে টুটা হুয়া ঘুংরু পড়া থা, পেইর কি নিচে আয়া অর ফিসাল কে সিড়ি সে গির কে মর গয়ে। উসকে বাদ উনকা বিবি ঘর বেচকে কাহি চলি গয়ী। জিসনে খারীদা থা, ওহ কুছ দিন কে বাদ ফির বেচ দিয়ে অভি কে সাব কো।"
"তুমি কি করে জানলে যে ও কারোর ক্ষতি করে না?"
"হাম যাব ইহা কাম কারনে আয়ে, তো হাম কো ভি আওয়াজ শুনাই দেনে লাগা। বহুত বার আইসা লাগা কি হামকো হাত পাকর কর উধার লে যা না চাহতি হে। হাম কো তভি সে সক থা কি ইয়ে নাচনেওয়ালি কি হি আত্মা হে। মে তো হর রোজ ইয়েহী রেহতা হূ, ইয়েহি রাত কো শোতা হূ। পর মেরে কো আজ তক কোই নুকসান নেহি কিয়া। ইসিলিয়ে বোলা থা বাবু।"
রাত প্রায় নটা। নিঃশব্দে বাড়ির পথ ধরেন সুবীর বাবু।
©সুব্রত চৌধুরী
ভয়ংকর। সত্যি ঘটনা নাকি এটা ?
ReplyDeleteযা রটে তার কিছু তো বটে।
Delete