উঠল বাই তো পাতুরি খাই

পাতুরি খাওয়ার ব্যাপারে আমার আবার একটু দুর্নাম আছে। ছোটবেলায় প্রথম যখন পাতুরি পাতে পড়ে, আমি তখন ক্লাস ২তে পড়ি। জনশ্রুতি আছে, মাছের ভক্ত আমি নাকি পাতুরির গন্ধে মোহিত হয়ে কলাপাতা সমেত কামড় বসিয়েছিলাম। আমার এহেন খাওয়া দেখে সবাই হেসে উঠলেও, নিমন্ত্রয়িতা দাড়িয়ে থেকে আমার পাতে গোটা ছয়েক পাতুরি পরিবেশন করিয়েছিলেন (পাতা ছাড়িয়ে) ও আমি অবলীলায় সেগুলো উদরস্থ করেছিলাম। এবং তার পর থেকে আমার কোনো অনুষ্ঠান বাড়ির নিমন্ত্রণে খাওয়াদাওয়ার উপর কড়া নজরদারি থাকত।
এ হেন পাতুরি কেলেঙ্কারি আরেকবার ঘটিয়েছিলাম নিজের দাদার বিয়েতে। বৌদিদের বাড়িতে ভেটকির পাতুরি হয়েছিলো। বিয়ের লগ্ন রাত দেড়টায়। পাতুরির গন্ধে মনটা আনচান করলেও ভাবছি বিয়েটা হলে একেবারেই দাদাবৌদির সাথে খাবো। রাত্রি এগারোটা নাগাদ বৌদির দাদা এসে জোর করে নিয়ে গিয়ে খেতে বসালো। ক্যাটেরার পরিবেশন করার সময় উনি নিজে দাড়িয়ে ছিলেন। উনিও পাতুরি দিতে বলছেন, পরিবেশনকারি দিয়েও চলেছেন ও আমি খেয়েও চলেছি। গোটা ২৫এক খেয়েছিলাম।

এত অবধি ঠিক ছিল, কিন্তু ব্যাপারটার আফটার এফেক্ট টা একটু বলি। আমার এই স্বল্প খ্যাটনের জন্যে বৌদি সেদিন বিয়ের পর পাতুরি পায় নি। বৌদির বান্ধবিকুলে খাওয়ার আগে অবধি যেটুকু হিরো হয়েছিলাম, আমার হারগিলে চেহারায় অমন খাওয়া দেখে আর কেউ পাত্তা দেয় নি। সবচাইতে চমকপ্রদ ব্যাপার হল, মহারানী হলেন আমার বৌদির দূরসম্পর্কের বোনঝি (বিয়ে যদিও সন্মন্ধ করেই হয়েছিলো)। বিয়ের পর প্রথম যেদিন মহারানীকে পাতুরি বানানোর অনুরোধ করি, সেদিন তার উবাচ ছিল "নিজের দাদার বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়ে ২৫টা পাতুরি খেতে দেখে ভেবেছিলাম, এমন হাড় হাভাতে ছেলে যেন আমার কপালে না জোটে। কিন্তু কপাল এমন, "এমন সেমন" নয়, একেবারে সেই সুপাত্তর টিই আমার কপালে জুটল। দুটোর বেশি বানাতে পারবোনা, এই আমি বলে রাখলাম।"

©সুব্রত চৌধুরী


Comments

Popular posts from this blog

কার্তিক পুজো ও খাওয়াদাওয়া

তালশাঁস সন্দেশ

পুজো ও বামুন